
তেল, গ্যাস আর কয়লার দুনিয়ায় নির্ভরতা কমাতে এবার যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব দিচ্ছে এক যুগান্তকারী উদ্যোগে—যা ইতিহাসে ‘সবচেয়ে বড় মোতায়েন’ হিসেবে আখ্যায়িত হচ্ছে। তবে এই ‘মোতায়েন’-এ সেনাবাহিনী নয়, রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। মেটা, অ্যামাজন ও গুগলের মতো টেক জায়ান্টরা এবার সম্মিলিতভাবে নেমেছে জীবাশ্ম জ্বালানির বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধে’।
লক্ষ্য ২০৫০ সালের মধ্যে পারমাণবিক জ্বালানির ব্যবহার তিন গুণ বাড়ানো
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে অনুষ্ঠিত সিইআরএউইক সম্মেলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকারনামা স্বাক্ষর করেছে একাধিক বড় কোম্পানি। বিশ্বে পারমাণবিক জ্বালানির পরিমাণ ২০৫০ সালের মধ্যে তিন গুণ করার লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (WNA) তত্ত্বাবধানে এই উদ্যোগকে বলা হচ্ছে ‘লার্জ এনার্জি কনজিউমারস প্লেজ’। ভবিষ্যতে মেরিটাইম, এভিয়েশন, তেল ও গ্যাস খাতের আরও অনেক কোম্পানিই এতে যুক্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০২৩ সালের জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনেও যুক্তরাষ্ট্রসহ ৩০টির বেশি দেশ ও বহু আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই লক্ষ্যকে সমর্থন করে চুক্তি করেছিল। এবারের নতুন উদ্যোগ মূলত সেই ঘোষণারই একটি বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ।
প্রযুক্তি জায়ান্টদের আনুষ্ঠানিক অংশগ্রহণ
এই প্রথমবারের মতো পারমাণবিক খাতের বাইরের বড় কোম্পানিগুলো প্রকাশ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ সম্প্রসারণের পক্ষে অবস্থান নিলো। মেটা, গুগল ও অ্যামাজন এই ‘লার্জ এনার্জি কনজিউমারস প্লেজ’-এ স্বাক্ষর করে জানিয়ে দিলো যে, তারা ২০৫০ সালের মধ্যে পারমাণবিক শক্তির পরিমাণ তিনগুণ করার উদ্যোগে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ওসিডেন্টাল ও জাপানি কোম্পানি আইএইচআই কর্পোরেশনও।
‘নেট জিরো’ অর্জনের যুদ্ধে পারমাণবিক শক্তির দিকে ঝুঁকছে প্রযুক্তি খাত
বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে হলে নির্ভরযোগ্য, স্থিতিশীল ও পরিষ্কার জ্বালানির বিকল্প নেই—এ বিষয়ে একমত গুগল, মেটা ও অ্যামাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের বক্তব্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কেন্দ্র (AI data centers) পরিচালনার জন্য যে বিশাল পরিমাণ বিদ্যুৎ দরকার, তা শুধু পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎস থেকে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই এখন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেই তারা ভবিষ্যতের সমাধান হিসেবে দেখছে।
ছোট আকারের পারমাণবিক চুল্লি তৈরিতে বিনিয়োগ
গত বছর অক্টোবরেই অ্যামাজন ও গুগল ঘোষণা দেয়, তারা ক্ষুদ্র পারমাণবিক চুল্লির প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করবে। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য আরও সাশ্রয়ী ও দ্রুত নির্মাণযোগ্য পারমাণবিক চুল্লি তৈরি হবে বলে আশাবাদী শিল্প খাত। এরপর ডিসেম্বরে মেটাও যুক্ত হয় এই প্রচেষ্টায় এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৪ গিগাওয়াট নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎ সংযুক্ত করার জন্য প্রকল্প আহ্বান করে।
পারমাণবিক শক্তি: ভবিষ্যতের নির্ভরযোগ্য ও টেকসই সমাধান
বর্তমানে বিশ্বে ৪৩৯টি পারমাণবিক চুল্লি থেকে মাত্র ৯ শতাংশ বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদিত হচ্ছে। এই নির্ভরতা বাড়ালে শুধু জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারই কমবে না, বরং বিশ্বব্যাপী জ্বালানির নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। বিশেষ করে যেসব দেশ এখনও জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানির ওপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য এটি হবে গেমচেঞ্জার।
মেটার গ্লোবাল এনার্জি প্রধান উর্বি পারেখ বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতি যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে পরিচ্ছন্ন, নির্ভরযোগ্য ও স্থিতিশীল জ্বালানির চাহিদা। পারমাণবিক শক্তিই এর অন্যতম সমাধান। এই উদ্যোগে যুক্ত হতে পেরে আমরা গর্বিত।’
সূত্র: https://www.ecoportal.net/en/deployment-google-meta-amazon-energy/8342/