হাঁটুর ব্যথা আর হালকা সমস্যা নয়, দ্রুত ছড়াচ্ছে নতুন মহামারি!

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা হৃদরোগের মতো রোগগুলোকে আমরা লাইফস্টাইল রোগ হিসেবেই চিনি। তবে নীরবে কিন্তু দ্রুত যে আরেকটি সমস্যা মানুষের জীবনকে গ্রাস করছে, সেটি হলো দীর্ঘস্থায়ী হাঁটুর ব্যথা।

একসময় কেবল বয়স্কদের রোগ মনে করা হলেও এখন তরুণ-তরুণী, চাকরিজীবী এমনকি কিশোরদের মাঝেও এই ব্যথা দেখা দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাঁটুর ব্যথাই হয়ে উঠছে পরবর্তী বড় লাইফস্টাইল রোগ।

অস্থি বিশেষজ্ঞদের মতে, চল্লিশের নিচে বয়সী রোগীদের মধ্যেও হাঁটুর ব্যথার অভিযোগ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। আধুনিক লাইফস্টাইলের দীর্ঘ সময় বসে থাকা, শারীরিক অনুশীলনের অভাব, খারাপ ভঙ্গি আর স্থূলতাই এই ব্যথার প্রধান কারণ।

হাঁটু আমাদের শরীরের ভারবহনকারী জয়েন্ট, প্রতিটি পদক্ষেপে নীরবে আমাদের সঙ্গ দেয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকলে হাঁটুর রক্তসঞ্চালন কমে যায়,

আশপাশের পেশি দুর্বল হয় এবং তা ক্রমে স্থায়ী ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়। এতে কার্টিলেজ ক্ষয়, ফোলা ও ব্যথা দেখা দেয়, এমনকি আগেভাগেই অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়ে।

নিষ্ক্রিয় লাইফস্টাইলের প্রভাব
আজকের কর্মজীবনে ডেস্কে বসে কাজ, গাড়িতে দীর্ঘ যাত্রা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভি সিরিজ দেখা কিংবা মোবাইল ফোনে নিমগ্ন থাকা আমাদের হাঁটুকে প্রায় অকেজো করে দিচ্ছে। শারীরিক নড়াচড়ার অভাবে হাঁটুর স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়, পেশির সমর্থন দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেকে আবার সঠিক প্রস্তুতি ছাড়াই ভারী ব্যায়াম বা দৌড়ঝাঁপে লিপ্ত হন, যা উল্টো ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ায়। শক্ত মেঝেতে দৌড়ানো, অনুপযুক্ত জুতা ব্যবহার বা ব্যথা উপেক্ষা করে অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া হাঁটুর অবক্ষয়কে দ্রুততর করে।

স্থূলতার প্রভাব
ওজন বৃদ্ধি হাঁটুর ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ। শরীরের প্রতি অতিরিক্ত এক কেজি ওজন হাঁটুর ওপর হাঁটার সময় প্রায় চার কেজি বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিন ধরে এই চাপ কার্টিলেজ ক্ষয় ঘটায়। একইসঙ্গে চর্বি টিস্যু শরীরে প্রদাহ তৈরি করে, যা জয়েন্টের অবক্ষয়কে আরও দ্রুত করে তোলে এবং আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

খারাপ ভঙ্গির ক্ষতি
ল্যাপটপ বা মোবাইল স্ক্রিনের দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা ঝুঁকে তাকিয়ে থাকা মেরুদণ্ড ও নিতম্বের স্বাভাবিক বিন্যাস পরিবর্তন করে ফেলে। এর ফলে হাঁটুর ওপর অসম চাপ পড়ে এবং সময়মতো সংশোধন না করলে তা ব্যথা ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

প্রতিরোধই সেরা সমাধান
অন্য অনেক দীর্ঘস্থায়ী রোগের মতো নয়, হাঁটুর ব্যথা মূলত প্রতিরোধযোগ্য। দৈনন্দিন জীবনে সামান্য পরিবর্তনই হাঁটুর সুস্থতা ধরে রাখতে পারে। ডেস্ক জব হলেও নিয়মিত উঠে হাঁটাহাঁটি করতে হবে, হালকা স্ট্রেচিং অনুশীলন অভ্যাসে আনতে হবে। ব্যায়ামের আগে অবশ্যই সঠিকভাবে ওয়ার্মআপ করতে হবে এবং হাঁটুর জন্য উপকারী কোয়াড্রিসেপস ও হ্যামস্ট্রিং শক্তিশালী করার ব্যায়াম করতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার ও নিয়মিত শরীরচর্চা জরুরি। এছাড়া সঠিক মাপের আরামদায়ক জুতা ব্যবহার করা উচিত, বিশেষ করে ব্যায়াম, দীর্ঘ হাঁটা বা দৌড়ানোর সময়।

দীর্ঘস্থায়ী হাঁটুর ব্যথা কখনো অবহেলা করা উচিত নয়। এক মাসের বেশি স্থায়ী ব্যথা, হাঁটাচলায় সমস্যা বা ফোলা দেখা দিলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসায় দেরি করলে ক্ষতি আরও বাড়বে এবং ভবিষ্যতে চিকিৎসার সুযোগ সীমিত হয়ে যাবে।

হাঁটুর যত্ন কেবল চিকিৎসার বিষয় নয়, এটি আসলে লাইফস্টাইলের পছন্দের অংশ। প্রশ্ন হলো, আপনি কি সঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন?

সূত্র:https://tinyurl.com/2s4aufxr

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *