“আর একটি নামও যেন যোগ না হয়”

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে কিছু নাম বারবার আলোচনায় আসে—তারা কেউ আমাদের প্রতিবেশী, কেউ শিক্ষার্থী, কেউ রাস্তায় দেখা এক সাধারণ মানুষ। কিন্তু সময়ের নির্মম বাস্তবতায় এই সাধারণ নামগুলো আজ অন্য এক পরিচয়ের প্রতীক। এরা কেউ ঘরে ফিরতে পারেনি, কেউ মুখ খুলেছিল বলে জীবন গেল, কেউ হাসতে গিয়েও নিস্তার পায়নি।

এই প্রতিবেদন এমন কিছু মানুষের গল্প, যাদের জীবন আজ উদাহরণ নয়, বরং সতর্কবার্তা।

তনু: বাড়ির বাইরে গেলেই অনিরাপদ! ২০১৬ সালে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু’র হত্যাকাণ্ড আমাদের সমাজের নারীদের নিরাপত্তা প্রশ্নে বারবার নাড়া দিয়েছে। এখনো বিচার হয়নি। আজো তনু’র মা সেই একটিই প্রশ্ন করেন, “আমার মেয়ের কি কোনো বিচার হবে না?”

আবরার ফাহাদ: মত প্রকাশ করলেই মৃত্যু! বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ’কে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর পিটিয়ে হত্যা করে একই প্রতিষ্ঠানের কিছু ছাত্র। কারণ? তিনি মত প্রকাশ করেছিলেন। একটি ফেসবুক পোস্টেই তার মৃত্যুর কারণ তৈরি হয়। এমন মৃত্যু আমাদের বাক স্বাধীনতাকে প্রতিদিন কবর দিচ্ছে।

তোফাজ্জল: খাবারেরও আছে মৃত্যুর ফাঁদ! একটি ভাইরাল ছবিতে দেখা যায় একজন ব্যক্তি খাবার খাচ্ছেন, তার নাম তোফাজ্জল হোসেন। পরে জানা যায়, তিনি খাওয়ার মাধ্যমে বিষক্রিয়ায় মারা যান। আজকাল খাবারের মাধ্যমেও মৃত্যু আসে—নকল, বিষাক্ত বা পরিকল্পিত?

পারভেজ: হাসতেও হবে সাবধানে! গাইবান্ধার এক যুবক পারভেজ, যিনি শুধুমাত্র হাসির জন্য প্রাণ হারিয়েছিলেন। ছোট্ট কোনো মন্তব্য বা মুখভঙ্গি—অন্যের চোখে অপমান মনে হলে সেটা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমন সামাজিক অসহিষ্ণুতার চরম দৃষ্টান্ত তিনি।

সোহাগ: চাঁদা না দিলে জীবন দিয়ে দাও! “চাঁদা দিবি, না হলে জীবন দিবি”—এই বাস্তব উক্তির শিকার হন সোহাগ, যিনি স্থানীয় চাঁদাবাজদের রোষানলে পড়েছিলেন। তার গল্প ভয়ংকর এক চক্রের ছায়া তুলে ধরে, যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে।

এই পাঁচটি নাম শুধু ব্যক্তি নয়, প্রতীক—বাংলাদেশের এক এক টুকরো নির্মম সত্য। নারীর নিরাপত্তা নেই, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই, খাবারেও আতঙ্ক, হাসি অপরাধ, চাঁদা না দিলে জীবন যায়।

আমরা কি চাই, কালকের খবরেও এমন আরেকটা মুখ, আরেকটা নাম যোগ হোক?

তবে সময় এখনই। প্রতিরোধ করতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে—না হলে “আমি”–ই হয়তো পরের ছবি।

লেখকঃ শামসুর রহমান হৃদয়,

কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, গাইবান্ধা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *