২ উপদেষ্টার অনুরোধের পর সেই মহিউদ্দিনকে ছেড়ে দিলো পুলিশ!

ধানমন্ডিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে আটক মহিউদ্দিনকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টার হস্তক্ষেপের পর বাবা-মার জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ধানমন্ডি থানা পুলিশ সেই মহিউদ্দিনকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে বুধবার ৩টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব সালেহ উদ্দিন সিফাত।

তিনি লিখেন, ‘ধানমন্ডিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে আটক মহিউদ্দিনকে কিছুক্ষণ আগে ধানমন্ডি থানা থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। মাহবুব আলম মাহির ও মুশফিকুর রহমান জোহান ভাই এবং আমি রাত ১০টায় তার জামিনের ব্যাপারে কথা বলতে ধানমন্ডি থানায় যাই।

কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে আটক হওয়ায় পুলিশ প্রথমে নিজেদের পক্ষ থেকে মুক্তি দিতে অপারগতা প্রকাশ করে।’ সিফাত আরো লিখেছেন, ‘পরবর্তীতে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ ভাইয়ের মাধ্যমে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

তিনি ছেলেটির মুক্তির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বস্ত করেন। পরবর্তীতে রাত ১২টা নাগাদ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি পর্যালোচনার পর মুচলেকা নিয়ে মহিউদ্দিনকে তার বাবা-মায়ের জিম্মায় ছেড়ে দেন।’

বুধবার ধানমন্ডিতে ফুটপাতে অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান চালায় একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেসময় মহিউদ্দিনের একটি ফুডকার্ট উচ্ছেদ করা হয়।

তখন মহিউদ্দিন এই উচ্ছেদ বন্ধে প্রতিবাদ করেন। তিনি দাবি করেন, এই বাজারের সবকিছুর দাম যখন ঊর্ধ্বমুখী তখন পরিবারকে সহযোগিতা করতে তিনি এই দোকান পরিচালনা করছেন। তিনি তো চুরি ডাকাতি করছেন না।

কাউকে অসুবিধা না করে এমন সৎ কাজও কেন তিনি এই বাংলাদেশে করতে পারবেন না? উপস্থিত গণমাধ্যমের সামনে এমন বক্তব্য দেওয়ার সময় পুলিশ তাঁকে আটক করে মারধর করতে করতে পুলিশ ভ্যানে ওঠায়। মহিউদ্দিনের এই বক্তব্য এবং পুলিশের মারধরের ভিডিও মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়।

মাগুরার শিশুটির মৃ’ত্যু: এবার যে নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি অপূর্ব জাহাঙ্গীর জানান, প্রধান উপদেষ্টা নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুর ১টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। গত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) মাগুরা শহরে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় ওই শিশুটি। পরদিন তাকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ওইদিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

সংকটাপন্ন শিশুটিকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিআইসিইউ) থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরদিন রোববার শিশুটিকে সিএমএইচে পেডিয়াট্রিক আইসিইউতে নেওয়া হয়। আজ ১৩ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়।

আরো যতদিন বাড়ল সশস্ত্র বাহিনীর ‘বিশেষ’ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা!

সশস্ত্র বাহিনীকে দেওয়া বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতার মেয়াদ আরো দুই মাস বা ৬০ দিন (১৫ মার্চ থেকে পরবর্তী ৬০ দিন) বাড়িয়েছে সরকার। সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব সমমর্যাদার কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এই ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ-২ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব জেতী প্রু-এর সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশের কথা বলা হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮-এর ১২(১) ও ১৭ ধারা অনুযায়ী বর্ণিত অধিক্ষেত্রে অর্থাৎ সারা দেশে ও সময়কালে স্পেশাল এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণ করা হলো।

সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব সমমর্যাদার কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং কোস্ট গার্ডে প্রেষণে নিয়োজিত সমমর্যাদার কর্মকর্তাসহ) সারা দেশে ফৌজধারী কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ এবং ১৪২ ধারার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে তারা কার্যক্রম চালাতে পারবেন।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। এর আগে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর সারা দেশে মোতায়েন করা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দুই মাস বা

৬০ দিনের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। আর গত ১৫ নভেম্বর ও ১২ জানুয়ারি দুই দফায় সশস্ত্র বাহিনীকে বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দেওয়া ক্ষমতা দুই মাস করে বাড়িয়েছিল সরকার।

মাগুরার সেই শিশুটির ব্রেনফাংশন করছে না, জানা গেল সর্বশেষ অবস্থা

মাগুরার শিশুটির শারীরিক অবস্থা ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন’ বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বেলা সোয়া ১১টার দিকে এক বার্তায় তারা জানায়, আজ আরও দুই বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে আট বছর বয়সী শিশুটির।

তার ব্রেনফাংশন করছে না; জিসিএস (কোমা) লেভেল ৩। রক্তচাপ ও অক্সিজেন লেভেলও অনেক কম। শিশুটি বর্তমানে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের শিশু আইসিইউতে আছে।

গত ৮মার্চ সন্ধ্যায় শিশুটিকে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সিএমএইচে আনা হয়। বুধবার শিশুটির চারবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় বলে সেনাবাহিনীর এক ফেসবুক পোস্টে জানানো হয়।

গত পাঁচই মার্চ শিশুটি মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়। ওই ঘটনায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন তার মা।

মামলা দায়েরের পর শিশুটির বোনের স্বামী, বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে তারা রিমান্ডে আছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে যা বললেন বৃটিশ হাইকমিশনার ‘সারাহ কুক’

বাংলাদেশে নিযুক্ত বৃটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে সম্মান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা ছাত্রদের সাহসিকতা ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে সম্মান জানাই। এ ধারাবাহিকতায় নিশ্চয়ই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, সুশাসন এবং জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবে।’

বুধবার (১২ মার্চ) সন্ধ্যায় সিলেটের বিমানবন্দর এলাকার পাঁচ তারকা গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে যুক্তরাজ্য হাইকমিশন ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সারাহ কুক। অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

এসময় সারাহ কুক মন্তব্য করেন, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে সিলেট অঞ্চলের মানুষের অবদান খুবই মূল্যবান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে যুক্তরাজ্যের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সহযোগী। সিলেটের কারণে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক দিন দিন আরও সুদৃঢ় হচ্ছে।

বাংলাদেশের সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা করেন সারাহ কুক। তিনি জানান, সিলেটে গত প্রলয়ংকরী বন্যায় ব্রিটিশ সরকার সাড়ে সাত কোটি টাকা অনুদান এবং ৫০ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতা করেছে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায়ও বাংলাদেশ সরকারকে অর্থায়ন করেছে ব্রিটিশ সরকার। যুক্তরাজ্য ও সিলেট কীভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে পারে, এর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

ইফতার মাহফিলে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী, পুলিশের সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মুশফেকুর রহমান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ, পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম,

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মোহাম্মদ জহিরুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সরওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল ও সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম, আইনজীবী সৈয়দা শিরিন আক্তার,

সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমদ প্রমুখ।

শেখ হাসিনা আবার ‘প্রধানমন্ত্রী’ হয়ে দেশে ফেরার প্রসঙ্গে যা বললেন প্রেস সচিব

ভারতের গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার একটি ছবি প্রকাশ করেছে। ওই ছবি ক্যাপশনে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের বরাতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা আবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশে ফিরবেন।

বুধবার (১২ মার্চ) প্রকাশিত টাইমস অব ইন্ডিয়ার সেই ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘পাগলের সুখ মনে মনে’।

শফিকুলের সেই পোস্টের কমেন্টে এটা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতে দেখা গেছে অনেককেই। শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে তাকে বরণ করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রস্তুত রয়েছে বলেও মন্তব্য তাদের।

পোস্টের ক্যাপশনে টাইমস অব ইন্ডিয়া উল্লেখ করেছে, ‘হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা রাব্বি আলম দাবি করেছেন, শেখ হাসিনা শীঘ্রই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসবেন। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপদ স্থান দেওয়ার জন্য ভারতকে ধন্যবাদ।’

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র জনতা আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যর্পণ অনুরোধ জানিয়েছে।

তবে সে অনুরোধের আনুষ্ঠানি কোনো জবাব আসেনি দিল্লি থেকে। ভারতের জবাব না আসলেও গণহত্যার বিচার কার্যক্রম থেমে নেই।

২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গতকাল বুধবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

মধ্যরাতে শাহবাগে কী হচ্ছে?

গণজাগরণ মঞ্চের মূখ্য সংগঠক লাকি আক্তারের গ্রেফতার ও ধর্ষণের দ্রুত বিচার সহ ৫ দাবিতে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে ইনকিলাব মঞ্চ। ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যরা বুধবার (১২ মার্চ) বিকেল ৪টা থেকেই শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নিয়েছে ও ৫টি দাবি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তুলে ধরেছে।

ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যরা বলছেন, যতদিন তাদের দাবি না মানা হবে ততদিন তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। এমনকি যদি ঈদ পর্যন্তও থাকা লাগে তারা এখানেই ঈদ করতে প্রস্তুত আছেন। সন্ধ্যার পরে তারা একটি মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্য প্রদক্ষিণ করে আবার ফিরে আসে শাহবাগে।

ইনকিলাব মঞ্চের পাঁচ দফা দাবি হলো, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ৯০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

একইসঙ্গে কেউ মিথ্যা ধর্ষণ মামলা করলে তাকেও সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে; বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দায়িত্বরত নিরস্ত্র পুলিশের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে; অবিলম্বে লাকী আক্তার ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করে ২০১৩ সালের রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র উন্মোচন করতে হবে;

জাতিসংঘকে অন্তর্ভুক্ত করে শাপলা ও পিলখানা গণহত্যার স্বাধীন বিচারিক তদন্ত কমিশন গঠন করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং জুলাই গণহত্যার দৃশ্যমান বিচারিক কার্যক্রম শুরু করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

‘প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে দেশে ফিরছেন শেখ হাসিনা!

গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনা ভারতে পলায়ন করেন। পরে তার ও তার দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে হত্যা ও বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে প্রায় কয়েক শ’ মামলা দায়ের করা হয়। তাকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি দেশের বিভিন্ন মহলের।

এমতাবস্থায় বুধবার (১২ মার্চ) ভারতের সংবাদ সংস্থা এএনআই-তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডক্টর রাব্বি আলম এক সাক্ষাতকারে দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আবারও বাংলাদেশে ফিরবেন শেখ হাসিনা। এসময় তিনি শেখ হাসিনাকে নিরাপদে ভারতে আশ্রয় দেয়ার জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনও করেন।

ডক্টর রাব্বি আলমের মতে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য তরুণ প্রজন্মকে দোষ দেওয়া ঠিক হবে না। তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্ম একটি ভুল করেছে, কিন্তু এটি তাদের দোষ নয়, তাদের কারসাজি করা হয়েছে।

ডক্টর রাব্বি আলম বলেন, বাংলাদেশ এখন আক্রমণের মধ্যে রয়েছে, এবং এই সংকট আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপে সমাধান হওয়া দরকার। একটি রাজনৈতিক অভ্যুত্থান গণতন্ত্রের অংশ হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশে যা ঘটছে, তা নয়। এটি একটি সন্ত্রাসী বিদ্রোহ।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের বহু নেতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে তিনি জানান। ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানাই যে তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপদ ভ্রমণের পথ সুগম করেছেন।

তিনি বাংলাদেশের বর্তমান উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে বলেন, তাদের ফিরে যেতে হবে, যেখান থেকে তারা এসেছে।

ডক্টর রাব্বি আলম জোর দিয়ে বলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসছেন, কিন্তু এই সংকট তরুণদের ভুল নয়, বরং তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।

মসজিদে ঢুকে ৩ ভাইকে হত্যা, প্রধান আসামি গ্রেফতার!

মাদারীপুরে মসজিদে ঢুকে তিন ভাইকে হত্যার ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত হোসেন সরদারকে (৬০) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। রাজধানী ঢাকার আশুলিয়া থানার চিত্রাশাইল থেকে মঙ্গলবার গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।

বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে র‍্যাব-৮-এর হেডকোয়াটার্স বরিশালে সংবাদ সম্মেলন করে এই তথ্য জানান অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নিস্তার আহমেদ।

তিনি জানান, চাঞ্চল্যকর ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছি। গ্রেপ্তারকৃত প্রধান আসামি হোসেন সরদার নিহত তিন ভাইয়ের আপন চাচা। বালু উত্তোলন নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছিল।

কর্নেল আহমেদ বলেন, যারা নিহত হয়েছেন এবং হত্যায় যারা অভিযুক্ত তারা সবাই একসময়ে আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বালু ব্যবসা ও বালু মহলার ইজারা নিয়ে বিরোধের সূত্র ধরে হোসেন সরদারের নেতৃত্বে ৮ মার্চ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ৮০/৯০ জনের দল নিয়ে চারটি বাড়িতে হামলা চালায়।

প্রাণ বাঁচাতে ভিক্টিমরা বাড়ির সামনের মসজিদে আশ্রয় নিলে হোসেন সরদারের নেতৃত্বের সন্ত্রাসীরা মসজিদে ঢুকে সাইফুল সরদার, তার ভাই আতাউর সরদারকে কুপিয়ে ঘটনাস্থলেই হত্যা করে।

এ ছাড়া তাদের চাচাতো ভাই পলাশ সরদারকে (১৮) গুরুতর জখম করলে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। হামলাকারীরা আরও পাঁচজনকে কুপিয়ে জখম করে এবং নিহতদেরসহ চারটি বাড়িতে আগুন দিয়ে লুটপাট করে।

অধিনায়ক বলেন, এই ঘটনায় মোট ৫৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। র‍্যাব-৮-এর অধীনে মাদারীপুর ক্যাম্পের পৃথক অভিযানে সুমন সরদার (৩৩) নামে এজাহারভুক্ত আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

নবদম্পতি যে কারণে উপাধ্যক্ষকে কুপিয়ে খুন করলো, জানালো পুলিশ

হাবীবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া রাজধানীর উত্তরখান এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাসায় আশ্রয় নেওয়া নবদম্পতিকে আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন, জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

পুলিশ জানায়, সাইফুর রহমানের সঙ্গে নবদম্পতির সম্পর্ক ছিল খুবই সন্দেহজনক। তদন্তের সূত্রে জানা যায়, নবদম্পতি গত ৭ মার্চ পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন এবং কিছুদিনের মধ্যে তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়।

সাইফুর রহমানের বাসায় বসবাসের সময় নবদম্পতির মধ্যে অস্বস্তি এবং ক্ষোভ তৈরি হতে থাকে, বিশেষ করে সাইফুর রহমান তরুণীকে শারীরিকভাবে বিরক্ত করতে শুরু করেন।

এক পর্যায়ে, সোমবার রাতে, সাইফুর রহমান এবং নবদম্পতির মধ্যে তীব্র ঝগড়া শুরু হয়, এবং এর পরই ছেলেটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাইফুর রহমানকে আঘাত করেন। পরবর্তীতে, তারা বাসা থেকে পালিয়ে যান এবং সাইফুর রহমানের মোবাইল ফোন ও বাসার চাবি নিয়ে চলে যান।

পুলিশের কর্মকর্তারা আরো জানিয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। সাইফুর রহমানের শারীরিক আচরণ, নবদম্পতির ক্ষোভ, এবং বাসায় তাদের বন্দি করা—এসব বিষয়ের সম্মিলিত প্রভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে তারা মনে করছেন। তবে এখনো হত্যার মূল কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি।

প্রতিবেশীরা জানান, সোমবার ভোরে সাইফুর রহমান বাসার টয়লেটের জানালা থেকে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছিলেন।

তাদের চিৎকার শুনে কিছু প্রতিবেশী এগিয়ে যান এবং ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে সাইফুর রহমানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।