‘মোদি’ কি এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন?

রমজান এলেই ব্যবসায়িক চাঙা ভাব দেখা যায় বাংলাদেশ ও কলকাতার নিউ মার্কেটে। একসময় রমজান মাসে নিউ মার্কেটের দোকানগুলো থাকত সরগরম, পা ফেলার জায়গা মিলত না। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলত বেচাকেনা।

কিন্তু এবার দৃশ্যপট পুরোপুরি ভিন্ন। নিউ মার্কেটের অলিগলিতে যেন নীরবতা নেমে এসেছে, কোথাও কোনো কোলাহল নেই। এর পেছনে বড় কারণ ভারত সরকারের নেওয়া কঠোর ভিসানীতি। প্রতিবেশী বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে মোদি প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দেয়।

পর্যটন ও মেডিকেল ভিসাতেও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। ফলশ্রুতিতে কলকাতার ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। নিউ মার্কেট, ট্রেজার আইল্যান্ড, সিম্পার মল—সব জায়গায় বাংলাদেশি ক্রেতার অভাবে বেচাকেনা স্থবির।

ব্যবসায়ীদের মতে, নিউ মার্কেটের মোট ব্যবসার ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ নির্ভর করত বাংলাদেশি ক্রেতাদের ওপর, যা রমজানে আরও বেড়ে যেত। এবার সেই চিত্র উল্টো—হোটেল খালি, দোকান বন্ধ, পরিবহন ব্যবসাও ঝুঁকির মুখে।

কলকাতার প্রায় ১০০টির বেশি হোটেল এবং ৩,০০০ দোকান বাংলাদেশি ক্রেতাদের ওপর নির্ভরশীল। অনেকে দোকান ভাড়া চালাতে পারছেন না, কেউ কেউ দোকান বন্ধ করতেও বাধ্য হচ্ছেন। ক্ষোভ জমছে ব্যবসায়ীদের মনে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে এই পরিস্থিতি তৈরি করায় মোদি প্রশাসনের ওপর ক্ষুব্ধ অনেকে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মোদি প্রশাসন বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের আশায় এই কৌশল নিয়েছে, কিন্তু এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে বড় আঘাত এসেছে।

এ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মোদি সরকারের মধ্যে টানাপোড়েন আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা দ্রুত সমাধান চান, কিন্তু মোদি প্রশাসন তাদের অভিযোগ শুনবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসভবনে অ’গ্নিকাণ্ড নিয়ে যা জানা গেলো

রাজধানীর বারিধারায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর বাসভবনের একটি ইউনিটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ভবনের ৫ম তলায় আগুন লাগে। ইউনিটটি একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ভাড়া দেওয়া ছিল।

প্রতিবেশীরা হঠাৎ ভবন থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন এবং দ্রুত ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার রাকিবুল হাসান জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রান্নাঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। যা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের কারণে ঘটতে পারে।

কী ঘটেছিল সেই রাতে? কান্নাজড়িত কণ্ঠে লো’মহর্ষক বর্ণনা দিলেন আছিয়ার ‘মা’

মাগুরায় আলোচিত ধর্ষণের শিকার ৮ বছরের শিশুটি পৃথিবীর মায়া ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে। শিশুটির মৃত্যুতে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে দেশবাসী। বুকের মানিককে হারিয়ে বাকরুদ্ধ তার মা। বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সকালে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) চিকিৎসাধীন অবস্থায় একে একে দুবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় শিশুটির। এরপর দুপুরে তৃতীয়বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পর আর হৃদস্পন্দন ফেরেনি অভিমানী হৃদয়ে। ঘৃণা, লজ্জা, অভিমানে জমে থাকা শ্বাস চিরমুক্তি নিয়ে অসীমে মিলিয়ে গেছে।

মায়ের অবুঝ মন যেন মানে না। গত কয়েক দিন ধরেই নাড়ি ছেঁড়া ধনের জীবন নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ছোট মেয়েকে হারিয়ে অনেকটা দিশেহারা তিনি। শিশুটির মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালের মেঝেতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিলাপ করছিলেন তার মা।

তিনি বলেন, ‘আমার মণি যেভাবে মরছে, আমার মণি যেভাবে গলায় ফাঁস দিয়ে মরছে, আমি তারও (অপরাধীর) ফাঁস দিয়ে বিচার চাই। (তার) এ রকম মৃত্যু চাই আমি, আমার মণির যেমন বেলেড দিয়ে কাটছে, গলায় ফাঁস দেসে, ঠিক সেরকম বিচার চাই আমি আপনাদের কাছে। ওরে যেন ওইরকম ফাঁসি দিয়ে মারে। ও রকম যেন ওরে বেলেড দিয়ে কাটে। আমার মেয়েটারে যে কষ্ট দিছে না? আমি তারেও এরকম দেখতে চাই।’

সেদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে শিশুটির মা বলেন, ওর আপার বাড়িতে যাওয়ার পর, ওর আপাকে ধরে মেরেছিল। তখন আছিয়া বলেছিল, সে বাড়িতে গিয়ে সব বলে দেবে। এরপরই সেই রাতে এ রকম ঘটনা ঘটেছে। বড় মাইয়াটারে ইচ্ছা মতো মেরে আলাদা ঘরে থুইয়া দিছিল। পরে রাত ১১টার দিকে আমার কাছে ফোন দিয়ে বলসে আমার মণি অসুস্থ। আমি গিয়ে দেখি সদর হাসপাতালে ভর্তি করাইছে। তারে রাইখে পলাইছে ওই মহিলা।

গত ৬ মার্চ মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে ধর্ষণের শিকার হয় শিশুটি। প্রথমে তাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। এরপর ৭ মার্চ রাতে তাকে ভেন্টিলেশনে নেয়া হয়।

গত ৮ মার্চ সন্ধ্যায় সংকটাপন্ন অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশুটির চিকিৎসায় সিএমএইচের প্রধান সার্জনকে প্রধান করে আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল।

ধর্ষণের ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে চার জনের নামে মামলা করেন। ধর্ষণের অভিযোগে শিশুটির ভগ্নিপতি সজীব (১৮), সজীবের ভাই রাতুল (১৭), তাদের বাবা হিটু মিয়া (৪২) ও মা জাবেদা বেগমকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শিশুটিকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার চার আসামির মধ্যে তিনজন পুরুষের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য এরইমধ্যে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকালে তিন আসামিকে মাগুরা থেকে ঢাকায় সিআইডির ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবে আনা হয়। একই সঙ্গে শিশুটির ডিএনএ নমুনাও জমা দেয়া হয়।

শিশু আছিয়ার মৃ’ত্যুতে কুরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে যা বললেন পিনাকী

আলোচিত অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও প্রবাসী লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য বলেছেন, জান্নাতে কোন ধর্ষক নাই। জান্নাতে আছিয়ার ঘুমে কেউ ব্যাঘাত ঘটাবে না। শুনেছি নির্যাতনের স্বীকার হয়ে মৃত্যুবরণ করলে সে শহীদের মর্যাদা পায়। সেই হিসেবে আমাদের বোন আছিয়া শহীদ।

আর কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, শহীদকে তোমরা মৃত বলো না। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা লিখেছেন।পিনাকী পোস্টে আরো লিখেছেন, আছিয়া মারা যায়নি। দুনিয়ার জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে আল্লাহর জান্নাতে চলে গেছে।

মহান আল্লাহ তাআলা তাকে ভালো রাখুক। আর যারা এই দুনিয়াটা ওর জন্য জাহান্নাম বানাইয়া দিছিলো, তাদের দুনিয়াকে আর আখিরাত দুইটাই যেন জাহান্নাম হয়ে যায়। “আমরা তো আল্লাহরই আর নিশ্চিতভাবে আমরা তাঁরই দিকে ফিরে যাব।” (২:১৫৬)

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুর ১টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ধর্ষণের শিকার শিশু আছিয়া শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। গত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) মাগুরা শহরে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় ওই শিশুটি। পরদিন তাকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ওইদিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

সংকটাপন্ন শিশুটিকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিআইসিইউ) থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরদিন রোববার শিশুটিকে সিএমএইচে পেডিয়াট্রিক আইসিইউতে নেওয়া হয়। আজ ১৩ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়।

ধ’র্ষণ ও নিপীড়কদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, জোর দাবি জানিয়েছে এনসিপি

মাগুরায় বোনের বাড়িতে ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকার শিশু আছিয়া আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন।

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। জাতীয় নাগরিক পার্টি – এনসিপি শিশু আছিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছে এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে।

নিপীড়িত আছিয়ার ওপর চলা নির্যাতন এবং তাঁর মৃত্যু আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার জন্য চরম লজ্জাজনক। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র গঠনের এমন গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে এই নির্মম ঘটনা হতাশাজনকও বটে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি – এনসিপি এই ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেই তীব্র প্রতিবাদ এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানিয়েছে।

ফ্যাসিবাদী আমলে প্রতিষ্ঠিত বিচারহীনতার সংস্কৃতির ফলে নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণের মতো ঘটনা বাংলাদেশে অবাধে ঘটেছে। জুলাই অভ্যুত্থানোত্তর নতুন বাংলাদেশে এই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিচার বিভাগকে

সক্রিয় ভূমিকা রাখার জোর দাবি জানাই আমরা। শিশু আছিয়া ধর্ষণসহ নারী নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের অতিদ্রুত তদন্তপূর্বক বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করে বিচারব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে জোর দাবি জানাচ্ছে এনসিপি।

শিশু আছিয়ার মৃ’ত্যু: ধ’র্ষণ ও হ’ত্যার বিচার কয়দিনের মধ্যে শুরু হবে জানালেন আসিফ নজরুল

মাগুরায় ৮ বছর বয়সী শিশুর ধর্ষণের ঘটনায় বিচার কাজ ৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আশ্বাস দেন তিনি।

আইন উপদেষ্টা বলেন, মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির ময়নাতদন্ত আজকেই সম্পন্ন হবে। এরইমধ্যে ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী ৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া যাবে। এ ঘটনায় ১২ থেকে ১৩ জন ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ধর্ষণ ও বলাৎকারের মামলাগুলো দ্রুত বিচার করতে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করা হবে। আগামী রোববারের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশোধনীর অধ্যাদেশ জারির চেষ্টা করা হবে। এসময় দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলেও হুঁশিয়ার করেন আসিফ নজরুল।

প্রসঙ্গত, মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশুটি আজ বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।

এ ব্যাপারে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আইএসপিআর জানায়, অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানানো যাচ্ছে যে, মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটি ১৩ মার্চ দুপুর ১টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শিশুটির আজ সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে, দুইবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার আর হৃৎস্পন্দন ফিরে আসেনি।

উল্লেখ্য, গত ৫ মার্চ আট বছরের শিশু আছিয়াবোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে গভীর রাতে ধর্ষণের শিকার হয়। শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেও তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। পরে বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) রাতে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার (৭ মার্চ) রাতে শিশুটিকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।

২ উপদেষ্টার অনুরোধের পর সেই মহিউদ্দিনকে ছেড়ে দিলো পুলিশ!

ধানমন্ডিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে আটক মহিউদ্দিনকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টার হস্তক্ষেপের পর বাবা-মার জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ধানমন্ডি থানা পুলিশ সেই মহিউদ্দিনকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে বুধবার ৩টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব সালেহ উদ্দিন সিফাত।

তিনি লিখেন, ‘ধানমন্ডিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে আটক মহিউদ্দিনকে কিছুক্ষণ আগে ধানমন্ডি থানা থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। মাহবুব আলম মাহির ও মুশফিকুর রহমান জোহান ভাই এবং আমি রাত ১০টায় তার জামিনের ব্যাপারে কথা বলতে ধানমন্ডি থানায় যাই।

কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে আটক হওয়ায় পুলিশ প্রথমে নিজেদের পক্ষ থেকে মুক্তি দিতে অপারগতা প্রকাশ করে।’ সিফাত আরো লিখেছেন, ‘পরবর্তীতে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ ভাইয়ের মাধ্যমে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

তিনি ছেলেটির মুক্তির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বস্ত করেন। পরবর্তীতে রাত ১২টা নাগাদ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি পর্যালোচনার পর মুচলেকা নিয়ে মহিউদ্দিনকে তার বাবা-মায়ের জিম্মায় ছেড়ে দেন।’

বুধবার ধানমন্ডিতে ফুটপাতে অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান চালায় একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেসময় মহিউদ্দিনের একটি ফুডকার্ট উচ্ছেদ করা হয়।

তখন মহিউদ্দিন এই উচ্ছেদ বন্ধে প্রতিবাদ করেন। তিনি দাবি করেন, এই বাজারের সবকিছুর দাম যখন ঊর্ধ্বমুখী তখন পরিবারকে সহযোগিতা করতে তিনি এই দোকান পরিচালনা করছেন। তিনি তো চুরি ডাকাতি করছেন না।

কাউকে অসুবিধা না করে এমন সৎ কাজও কেন তিনি এই বাংলাদেশে করতে পারবেন না? উপস্থিত গণমাধ্যমের সামনে এমন বক্তব্য দেওয়ার সময় পুলিশ তাঁকে আটক করে মারধর করতে করতে পুলিশ ভ্যানে ওঠায়। মহিউদ্দিনের এই বক্তব্য এবং পুলিশের মারধরের ভিডিও মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়।

মাগুরার শিশুটির মৃ’ত্যু: এবার যে নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি অপূর্ব জাহাঙ্গীর জানান, প্রধান উপদেষ্টা নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুর ১টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। গত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) মাগুরা শহরে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় ওই শিশুটি। পরদিন তাকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ওইদিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

সংকটাপন্ন শিশুটিকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিআইসিইউ) থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরদিন রোববার শিশুটিকে সিএমএইচে পেডিয়াট্রিক আইসিইউতে নেওয়া হয়। আজ ১৩ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়।

আরো যতদিন বাড়ল সশস্ত্র বাহিনীর ‘বিশেষ’ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা!

সশস্ত্র বাহিনীকে দেওয়া বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতার মেয়াদ আরো দুই মাস বা ৬০ দিন (১৫ মার্চ থেকে পরবর্তী ৬০ দিন) বাড়িয়েছে সরকার। সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব সমমর্যাদার কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এই ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ-২ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব জেতী প্রু-এর সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশের কথা বলা হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮-এর ১২(১) ও ১৭ ধারা অনুযায়ী বর্ণিত অধিক্ষেত্রে অর্থাৎ সারা দেশে ও সময়কালে স্পেশাল এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণ করা হলো।

সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব সমমর্যাদার কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং কোস্ট গার্ডে প্রেষণে নিয়োজিত সমমর্যাদার কর্মকর্তাসহ) সারা দেশে ফৌজধারী কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ এবং ১৪২ ধারার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে তারা কার্যক্রম চালাতে পারবেন।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। এর আগে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর সারা দেশে মোতায়েন করা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দুই মাস বা

৬০ দিনের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। আর গত ১৫ নভেম্বর ও ১২ জানুয়ারি দুই দফায় সশস্ত্র বাহিনীকে বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দেওয়া ক্ষমতা দুই মাস করে বাড়িয়েছিল সরকার।

শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেল না মাগুরায় নি’র্যাতিত সেই শিশুটিকে

ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাগুরার সেই শিশুটি মারা গেছে। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বেলা ১টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সিএমএইচের পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক কর্নেল নাজমুল হামিদ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সেই সঙ্গে বাহিনীটি শিশুটির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে।

অধ্যাপক কর্নেল নাজমুল হামিদ বলেন, আজ সকালবেলা দুই দফায় শিশুটির কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। সিপিআর দেওয়ার পর তার হৃৎস্পন্দন ফিরে আসে। কিন্তু বেলা ১২টায় তার আবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। এই দফায় সিপিআর দেওয়ার পরও তার হৃৎস্পন্দন আর ফিরে আসেনি। বেলা ১টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানানো যাচ্ছে যে, মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটি আজ দুপুর ১টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

সিএমএইচের সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শিশুটির আজ সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। দুইবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার আর হৃৎস্পন্দন ফিরে আসেনি। গত ৮ মার্চ শিশুটিকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি করা হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শিশুটির শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে এবং যেকোনো প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শিশুটির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে।