গোয়েন্দা অনুসন্ধান: ডাকাতি ও ছিনতাই নিয়ে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও ডাকাতির মতো অপরাধ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ার পেছনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ অনেকাংশে দায়ী। নিষিদ্ধ ঘোষিত এ সংগঠনটির মাস্টারমাইন্ডরা পরিকল্পিতভাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পেশাদার অপরাধীদের নানা পন্থায় মাঠে নামাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে নিজেরাও যুক্ত হচ্ছে। এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারসহ বিভিন্ন অ্যাপস গ্রুপের মাধ্যমে। গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এদিকে এ চক্রের পুরো নেটওয়ার্ককে চিহ্নিত করতে জড়িতদের তালিকা প্রণয়নসহ পাঁচ ধরনের তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের উচ্চপর্যায় থেকে ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, মূলত পাঁচটি বিষয়ে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়। এর মধ্যে রয়েছে-নিষিদ্ধ সংগঠনটির নেতাকর্মীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, সামাজিক কার্যক্রম এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে হালনাগাদ খবরাখবর রাখা। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এই নির্দেশনায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পূর্ণ নাম ও পরিচয়, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর (যদি থাকে), রাজনৈতিক পরিচয় ও সংগঠনে অবস্থান, অতীত ও বর্তমান কার্যক্রমের বিবরণ, জিডি বা মামলা থাকলে তার তথ্য জরুরি ভিত্তিতে দিতে বলা হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, হয়রানি বা মামলার জন্য নয়, নিষিদ্ধ এই সংগঠনটির নেতাকর্মীদের কার্যক্রম এবং গতিবিধি নজরদারিতে রাখতেই তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। তাদের দাবি, যে কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের জন্য এসব তথ্য প্রয়োজন। শুধু ছাত্রলীগ নয়, নিষিদ্ধ সব সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে।

ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর পর থেকেই মূল দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও আত্মগোপনে চলে যান। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ছাত্র সমাজের দাবির মুখে গত বছরের ২৩ অক্টোবর ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।

গোয়েন্দা তথ্য বলছে, আত্মগোপনে থাকা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সংগঠিত হয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে কিছুদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। যে রকম সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা করা হয়েছিল সেটি হয়নি। কিন্তু এক মাস ধরে হঠাৎ করেই সামাজিক অস্থিরতা বেড়ে গেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই, ডাকাতির মতো ঘটনা বেড়ে চলেছে। তবে এসব অপরাধের বেশির ভাগ পরিকল্পিত এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাত রয়েছে। এ অবস্থায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও সতর্ক ও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, নিষিদ্ধ এই সংগঠনটির নেতাকর্মীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন বলেও মত দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

একই অভিযোগ রয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকেও। তাদের মতে, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের হাতে অবৈধ অস্ত্র ছাড়াও কালোটাকাও আছে। এ দুই শক্তিতে ভর করে নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এজন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গতিবিধি অনুসরণ করতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জেলা পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর আবার জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে থানায় থানায় চিঠি দিয়ে দ্রুত তাদের তালিকা সংগ্রহ করে সদর দপ্তরে পাঠাতে বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর বলেছে, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন। আইন অনুযায়ী এদের সব কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাদের মতে, কোনো দমন-পীড়ন, হয়রানি বা মামলা করতে নয়; রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের তথ্য-উপাত্ত যাচাই করা হচ্ছে। শুধু ছাত্রলীগই নয়, হিজবুত তাহরির, সশস্ত্র সর্বহারা পার্টিসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত অন্যান্য দল এবং সংগঠনের বিষয়েও খোঁজখবর নিচ্ছেন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মুখপাত্র) ইনামুল হক সাগর সোমবার যুগান্তরকে বলেন, মামলার আসামিদের খোঁজখবর রাখা মামলা তদারকির নিয়মিত অংশ। তবে ছাত্রলীগের তালিকার চিঠির বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপাররা বিস্তারিত বলতে পারবেন।

এ প্রসঙ্গে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরল হুদা যুগান্তরকে বলেন, কেউ রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ হলে পুলিশ তার তালিকা করবে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে-এটাই স্বাভাবিক। এটি বিশেষ কোনো দলের জন্য নয়, যে কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের জন্যই প্রযোজ্য।

অভিযোগ রয়েছে, এরই মধ্যে আত্মগোপনে থাকা সংগঠনটির নেতাকর্মীদের অনেকেই ভোল পালটাতে শুরু করেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র সংগঠনে আশ্রয় নেওয়ার পথ খুঁজছেন তারা। দলগুলোও আবার নিজেদের প্রভাব বলয় ও শক্তি বাড়াতে কাছে টানছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত এই সংগঠনের নেতাকর্মীদের। এর বাইরে আত্মগোপনে থাকা সংগঠনটির অধিকাংশ নেতাকর্মী নানা উপায়ে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে তথ্য মিলেছে। জানা গেছে, ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, সিগন্যালসহ বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে এরা সংগঠিত হওয়াসহ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। এছাড়া সমাজে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে তারা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য, মাদকসেবীসহ চিহ্নিত অপরাধীদের কাজে লাগাচ্ছে। এদের ব্যবহার করে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ সংঘটিত করাচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজনমতো আর্থিক বিনিয়োগও করা হচ্ছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। কিছুদিন আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একটি অডিও ভাইরাল হয়। ঢাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে বিদেশে পলাতক আওয়ামী লীগের এই নেতা নির্দেশ দেন। এজন্য যা যা করণীয় তিনি করবেন বলেও অডিও বার্তায় শোনা যায়। অডিও বার্তায় জাহাঙ্গীর আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘যে শহরে আমাদের নেতাকর্মী দিনের বেলায় চলাচল করতে পারবে না, সে শহরে রাতে কেউ ঘুমাতে পারবে না।’ এ বক্তব্য শোনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নড়েচড়ে বসে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের পর সংগঠনটির পুনর্গঠন বা বিকল্প শক্তি তৈরির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষ করে একটানা ক্ষমতার ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের মূল লাঠিয়াল বাহিনী হিসাবেই পরিচিতি পায় নিষিদ্ধ ঘোষিত এই সংগঠনটি। এরা হেলমেট বাহিনী বলেও পরিচিত। ক্যাম্পাসগুলোতে এমন কোনো অন্যায়, অনাচার নেই, যা তাদের হাত ধরে ঘটেনি। রুম দখল, টর্চার সেল তৈরি করে নিরীহ ছাত্রদের দমন-পীড়ন, হয়রানি-নির্যাতন, টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি-জবরদখল-সর্বত্রজুড়ে ছিল ছাত্রলীগের নাম। কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে ছাত্রলীগের কথাই ছিল আইন। এই আইন অমান্যের শাস্তি ছিল ভয়াবহ এবং নির্মম। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর সেই চিরচেনা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সদস্যরা চলে যান আত্মগোপনে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল এ প্রসঙ্গে সোমবার যুগান্তরকে বলেন, একটি ছেলে বা একটি মেয়ে এক সময় ছাত্রলীগ করেছে, এটা অপরাধ নয়। কিন্তু ছাত্রলীগ করার নামে যারা নানা সময়ে অপরাধ করেছে, যারা চিহ্নিত অপরাধী, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, মামলা রয়েছে-তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে এই অপরাধীরা নতুন করে সংগঠিত হয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াবে। এমনকি এরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে আশ্রয় নেওয়ারও চেষ্টা করবে। কেউ যাতে তাদের আশ্রয় না দেয়, এটিও নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি নিরপরাধ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন-তাও নিশ্চিত করতে হবে।

‘ল তে লাকি তুই হাসিনা তুই হাসিনা’, স্লোগানে উত্তাল জবি ক্যাম্পাস!

শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক লাকি আক্তারকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা লাকি আক্তারকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরদিনের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানান।

মঙ্গলবার রাত দেড়টায় ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা রায় সাহেব বাজার মোড় প্রদক্ষিণ করে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জড়ো হন।

মিছিলে শিক্ষার্থীরা, ১৩ এর খুনিরা, হুঁশিয়ার সাবধান; শাহবাগের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন; ল তে লাকি, তুই হাসিনা, তুই হাসিনা; শহিদেরা দিচ্ছে ডাক, শাহবাগ নিপাত যাক; ওয়ান-টু-থ্রি-ফোর, শাহবাগ নো মোর; শাহবাগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না ইত্যাদি স্লোগান দেন।

এ সময় সমাবেশে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নূর নবী বলেন, শাহবাগ একটি ঘৃণিত নাম হয়ে থাকবে। নতুন করে আর আইডেন্টিটি তৈরি করতে পারবে না। আজকে একটা ইস্যু তৈরি করে পরিকল্পিতভাবে লাকি আক্তারদের মাঠে নামানো হয়েছে। আমরা দেখেছি, পুলিশ প্রশাসনের ওপর তারা প্রথমে হামলা করেছে। এই জগন্নাথের মাটি থেকে লাকি আক্তারকে চিরদিনের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে হবে।

আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, হাজার হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। সেই স্বাধীনতাকে ধুলোর সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার জন্য এক ঝাঁক ভারতীয় হায়েনা মাঠে নেমেছে। ২০১৩ সালের যেসব কুত্তা শাহবাগে ঘেউঘেউ করেছিল, তাদের আবারও পদচারণা দেখা যায়। তারা কোন সাহসে আমার দেশের পুলিশের ওপর হামলার সাহস পায়।

লাকিসহ যেসব শাহবাগিরা ২০১৩ সালে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল, তাদের কেনো এখনো গ্রেফতার হচ্ছে না? আবার দেশকে অস্থিতিশীল করতে চান, তাহলে আবার জুলাই বিপ্লব হবে। ইন্টেরিম সরকারকে বলতে চাই, আপনারা মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।

আপনারা পাড়া মহল্লায়, গ্রামে, যেখানে শাহবাগি নামক প্রাণীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে, আপনারা প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।

ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তৌফিক বলেন, আমরা দেখেছি, ২০১৩ সালে যেই লাকি আক্তাররা, ইমরান এইচ সরকাররা দেশের জনগণকে জিম্মি করে এক নারকীয় অবস্থা সৃষ্টি করেছিল। যদি আবারও তারা বাংলাদেশে ২০১৩ সালের মতো নারকীয় পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়, আমরা আবু সাঈদ, মুগ্ধদের মতো রুখে দিবো।

ডিলারের গুদামে মিলল সাড়ে ৬ হাজার লিটার সয়াবিন তেল

চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁওয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের গুদামে মিলেছে মজুদ করে রাখা প্রায় ৬ হাজার ৭শ লিটার সয়াবিন তেল। প্রতিষ্ঠানটিকে বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট সৃষ্টি এবং সয়াবিন তেল বিক্রির সঙ্গে শর্তসাপেক্ষে অপ্রচলিত পণ্য নিতে ক্রেতাদের বাধ্য করার অপরাধে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

সোমবার (১০ মার্চ) ওই এলাকায় অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানে নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ফয়েজ উল্যাহ। অভিযানে আরও উপস্থিত ছিলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আনিছুর রহমান।

ভোক্তা অধিকার চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ফয়েজ উল্যাহ জানান, চান্দগাঁওয়ের খতিবের হাট মসজিদ গলিতে মেসার্স এম এম এন্টারপ্রাইজে ৪২৩ কার্টুন সয়াবিন তেলের মজুদ পাওয়া যায়। যা হিসাবের খাতার চেয়েও শতাধিক কার্টন বেশি। লিটারের হিসেবে প্রায় ৬ হাজার ৭শ লিটার। প্রতিষ্ঠানের প্রোপাইটর মো. মহিউদ্দিন টি.কে গ্রুপের ডিলার।

প্রতিষ্ঠানটি বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট সৃষ্টি এবং সয়াবিন তেল বিক্রির সঙ্গে শর্তসাপেক্ষে অপ্রচলিত পণ্য নিতে ক্রেতাদের বাধ্য করছিল। যার ফলে প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। শর্ত ছাড়া মজুদকৃত তেল খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পাইকারি দামে বিক্রি করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক মো. আনিছুর রহমান জানান, আজকের অভিযানে দুই প্রতিষ্ঠানে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একইসঙ্গে বহদ্দারহাট কাঁচা বাজারে অন্যান্য মুদি দোকানিদের ভোক্তা অধিকার বিরোধী সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়।

তাহলে কি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগই মাস্টারমাইন্ড

ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও ডাকাতির মতো অপরাধ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ার পেছনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ অনেকাংশে দায়ী। নিষিদ্ধ ঘোষিত এ সংগঠনটির মাস্টারমাইন্ডরা পরিকল্পিতভাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পেশাদার অপরাধীদের নানা পন্থায় মাঠে নামাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে নিজেরাও যুক্ত হচ্ছে।

এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারসহ বিভিন্ন অ্যাপস গ্রুপের মাধ্যমে। গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এদিকে এ চক্রের পুরো নেটওয়ার্ককে চিহ্নিত করতে জড়িতদের তালিকা প্রণয়নসহ পাঁচ ধরনের তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের উচ্চপর্যায় থেকে ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, মূলত পাঁচটি বিষয়ে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়। এর মধ্যে রয়েছে-নিষিদ্ধ সংগঠনটির নেতাকর্মীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, সামাজিক কার্যক্রম এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে হালনাগাদ খবরাখবর রাখা। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এই নির্দেশনায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পূর্ণ নাম ও পরিচয়,

জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর (যদি থাকে), রাজনৈতিক পরিচয় ও সংগঠনে অবস্থান, অতীত ও বর্তমান কার্যক্রমের বিবরণ, জিডি বা মামলা থাকলে তার তথ্য জরুরি ভিত্তিতে দিতে বলা হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, হয়রানি বা মামলার জন্য নয়,

নিষিদ্ধ এই সংগঠনটির নেতাকর্মীদের কার্যক্রম এবং গতিবিধি নজরদারিতে রাখতেই তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। তাদের দাবি, যে কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের জন্য এসব তথ্য প্রয়োজন। শুধু ছাত্রলীগ নয়, নিষিদ্ধ সব সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে।

ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর পর থেকেই মূল দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও আত্মগোপনে চলে যান। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ছাত্র সমাজের দাবির মুখে গত বছরের ২৩ অক্টোবর ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।

গোয়েন্দা তথ্য বলছে, আত্মগোপনে থাকা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সংগঠিত হয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে কিছুদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। যে রকম সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা করা হয়েছিল সেটি হয়নি। কিন্তু এক মাস ধরে হঠাৎ করেই সামাজিক অস্থিরতা বেড়ে গেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই, ডাকাতির মতো ঘটনা বেড়ে চলেছে। তবে এসব অপরাধের বেশির ভাগ পরিকল্পিত এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাত রয়েছে। এ অবস্থায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও সতর্ক ও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, নিষিদ্ধ এই সংগঠনটির নেতাকর্মীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন বলেও মত দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

একই অভিযোগ রয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকেও। তাদের মতে, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের হাতে অবৈধ অস্ত্র ছাড়াও কালোটাকাও আছে। এ দুই শক্তিতে ভর করে নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এজন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গতিবিধি অনুসরণ করতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জেলা পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর আবার জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে থানায় থানায় চিঠি দিয়ে দ্রুত তাদের তালিকা সংগ্রহ করে সদর দপ্তরে পাঠাতে বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর বলেছে, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন। আইন অনুযায়ী এদের সব কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাদের মতে, কোনো দমন-পীড়ন, হয়রানি বা মামলা করতে নয়; রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের তথ্য-উপাত্ত যাচাই করা হচ্ছে। শুধু ছাত্রলীগই নয়, হিজবুত তাহরির, সশস্ত্র সর্বহারা পার্টিসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত অন্যান্য দল এবং সংগঠনের বিষয়েও খোঁজখবর নিচ্ছেন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মুখপাত্র) ইনামুল হক সাগর সোমবার যুগান্তরকে বলেন, মামলার আসামিদের খোঁজখবর রাখা মামলা তদারকির নিয়মিত অংশ। তবে ছাত্রলীগের তালিকার চিঠির বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপাররা বিস্তারিত বলতে পারবেন।

এ প্রসঙ্গে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরল হুদা যুগান্তরকে বলেন, কেউ রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ হলে পুলিশ তার তালিকা করবে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে-এটাই স্বাভাবিক। এটি বিশেষ কোনো দলের জন্য নয়, যে কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের জন্যই প্রযোজ্য।

অভিযোগ রয়েছে, এরই মধ্যে আত্মগোপনে থাকা সংগঠনটির নেতাকর্মীদের অনেকেই ভোল পালটাতে শুরু করেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র সংগঠনে আশ্রয় নেওয়ার পথ খুঁজছেন তারা। দলগুলোও আবার নিজেদের প্রভাব বলয় ও শক্তি বাড়াতে কাছে টানছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত এই সংগঠনের নেতাকর্মীদের। এর বাইরে আত্মগোপনে থাকা সংগঠনটির অধিকাংশ নেতাকর্মী নানা উপায়ে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে তথ্য মিলেছে। জানা গেছে, ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, সিগন্যালসহ বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে এরা সংগঠিত হওয়াসহ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। এছাড়া সমাজে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে তারা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য, মাদকসেবীসহ চিহ্নিত অপরাধীদের কাজে লাগাচ্ছে। এদের ব্যবহার করে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ সংঘটিত করাচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজনমতো আর্থিক বিনিয়োগও করা হচ্ছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। কিছুদিন আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একটি অডিও ভাইরাল হয়। ঢাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে বিদেশে পলাতক আওয়ামী লীগের এই নেতা নির্দেশ দেন। এজন্য যা যা করণীয় তিনি করবেন বলেও অডিও বার্তায় শোনা যায়। অডিও বার্তায় জাহাঙ্গীর আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘যে শহরে আমাদের নেতাকর্মী দিনের বেলায় চলাচল করতে পারবে না, সে শহরে রাতে কেউ ঘুমাতে পারবে না।’ এ বক্তব্য শোনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নড়েচড়ে বসে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের পর সংগঠনটির পুনর্গঠন বা বিকল্প শক্তি তৈরির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষ করে একটানা ক্ষমতার ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের মূল লাঠিয়াল বাহিনী হিসাবেই পরিচিতি পায় নিষিদ্ধ ঘোষিত এই সংগঠনটি। এরা হেলমেট বাহিনী বলেও পরিচিত। ক্যাম্পাসগুলোতে এমন কোনো অন্যায়, অনাচার নেই, যা তাদের হাত ধরে ঘটেনি। রুম দখল, টর্চার সেল তৈরি করে নিরীহ ছাত্রদের দমন-পীড়ন, হয়রানি-নির্যাতন, টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি-জবরদখল-সর্বত্রজুড়ে ছিল ছাত্রলীগের নাম। কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে ছাত্রলীগের কথাই ছিল আইন। এই আইন অমান্যের শাস্তি ছিল ভয়াবহ এবং নির্মম। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর সেই চিরচেনা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সদস্যরা চলে যান আত্মগোপনে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল এ প্রসঙ্গে সোমবার যুগান্তরকে বলেন, একটি ছেলে বা একটি মেয়ে এক সময় ছাত্রলীগ করেছে, এটা অপরাধ নয়। কিন্তু ছাত্রলীগ করার নামে যারা নানা সময়ে অপরাধ করেছে, যারা চিহ্নিত অপরাধী, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, মামলা রয়েছে-তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে এই অপরাধীরা নতুন করে সংগঠিত হয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াবে। এমনকি এরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে আশ্রয় নেওয়ারও চেষ্টা করবে। কেউ যাতে তাদের আশ্রয় না দেয়, এটিও নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি নিরপরাধ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন-তাও নিশ্চিত করতে হবে।

ডিসেম্বরের মধ্যেই বিএনপি কেন নির্বাচন চায় কারণ জানালেন গোলাম মওলা রনি

সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মওলা রনি বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন কবে হবে এই বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে দুইটি ধারা তৈরি হয়ে গেছে। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি চাচ্ছে ডিসেম্বরের মাসে নির্বাচন হতেই হবে। কোনো জানুয়ারি নেই, কোনো ফেব্রুয়ারি নেই।

দ্বিতীয়ত ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনো স্থানীয় নির্বাচন হওয়া যাবে না। এই বিষয়টি নিয়ে দলটি এতোটা পয়েন্ট অব নো রিটার্নে চলে গেছে যে তারা বুঝতে পেরেছে, তারা যদি এ কাজটি করতে না পারে বাংলাদেশে তাদের রাজনীতির অস্তিত্ব থাকবে না এবং তাদেরকে নিয়ে যেসকল দুর্নাম,

বদনাম এখন তাদের প্রতিপক্ষ ছড়াচ্ছে স্বয়ং তারেক রহমান থেকে শুরু করে সালাউদি্দন সাহেব, মির্জা ফখরুল ইসলাম থেকে শুরু করে একেবারে ছাত্রদল-যুবদলের প্রান্তিক পর‌্যায়ে যারা নেতাকর্মীরা তাদের ক্যারেক্টার অ্যাসাসিনেশনের জন্য কখনও এস আলমকে আনা হচ্ছে এরপরে কিছুদিন পরে আওয়ামী লীগের দোসরদের আনা হবে।

‘মস্তিষ্ক প্রতিক্রিয়াহীন’! মাগুরার সেই শিশুটির শারীরিক অবস্থা আবারও অবনতি

মাগুরার সেই শিশুর শারীরিক অবস্থার আবারও অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তার ‘মস্তিষ্ক প্রতিক্রিয়াহীন’ হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন মেডিকেল বোর্ডের এক চিকিৎসক। মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকালে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গতকাল সোমবার সামান্য উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু আজ শিশুটির মস্তিষ্ক প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে পড়েছে। ঘটনার সময় শিশুটিকে যখন ফাঁস দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়, তখন তার মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়।

পরদিন বেলা ১১টায় হাসপাতালে নেওয়ার আগপর্যন্ত ওই অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছিল। ফলে দীর্ঘ সময় অক্সিজেন না পেয়ে মস্তিষ্কের বড় ক্ষতি হয়েছে। শিশুটির চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে গঠিত বোর্ডের এক চিকিৎসক ও শিশুটির স্বজনের সঙ্গে আজ সকালে কথা বলে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতির কথা জানা গেছে।

চিকিৎসক জানান, গ্লাসগো কোমা স্কেল (জিসিএস) (মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে কোনো ব্যক্তির চেতনার মাত্রা পরিমাপ করা হয়) আবারও ৩–এ নেমে এসেছে। স্বাভাবিক মাত্রা ১৫। জিসিএস ৩ অবস্থাকে মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়াহীন অবস্থা বলে বিবেচনা করা হয়। গতকাল সকাল থেকে তার জিএসএস ৩ থেকে উন্নতি হয়ে ৫–এ উঠেছিল বলে অবস্থার কিছুটা উন্নতি ধরে নেওয়া হয়েছিল।

বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের এই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন শিশুটির মা। শিশুটির ভগ্নিপতি, বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে যান। ওই দিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

এরপর শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সংকটাপন্ন শিশুটিকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিআইসিইউ থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। শিশুটিকে এখনো লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।

সিএমএইচের প্রধান সার্জনকে প্রধান করে আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডে রয়েছেন সার্জিক্যাল বিশেষজ্ঞ, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, প্লাস্টিক সার্জন, শিশু নিউরোলজি বিভাগ, অ্যানেসথেসিয়া, শিশু হৃদ্‌রোগ বিভাগ, শিশু বিভাগের সার্জন, ইউরোলজি বিভাগ ও থোরাসিক সার্জন বিভাগের চিকিৎসকেরা।

মেয়েটির শখের ফোন ছোঁ মেরে নিয়ে পালায় যুবক, দেবদূতের মতো ধরলেন এক শিক্ষার্থী, তারপর…

সোমবার দুপুর একটা। রমজানের মধ্য দুপুরে রাজধানীর পল্টন মোড়ে অন্য সময়ের মতো গাড়ির জটলা। কিন্তু কে জানত যানজটের মধ্যে বড় বিপদে পড়বেন মায়ের সঙ্গে ঈদের কেনাকাটা করতে রওনা হওয়া সিদ্ধেশ্বরী কলেজের শিক্ষার্থী সাবিনা (ছদ্মনাম)। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েকে অনেক কষ্টে একটা স্মার্ট ফোন কিনে দিয়েছিলেন বাবা-মা। বাসের জানালার পাশে বসে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিল মেয়েটি। হঠাৎ কল আসায় মোবাইল বের করতেই ছিনতাইকারী ছোঁ মেরে নিয়ে পালিয়ে যায়।

শখের মোবাইলটি হারিয়ে মা-মেয়ে যখন পাগলপ্রায় তখন পেছনে আরেকটি বাস থেকে ছিনতাইয়ের ঘটনা দেখছিলেন সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম। দেবদূতের মতো নেমে এসে ছিনতাইকারীকে ফলো করে আরেকটি বাস থেকে ধরে ফেলেন। উদ্ধার করে দেন মেয়েটির মোবাইলটি।

এরপরই শুরু হয় ছিনতাইকারীকে গণধোলাই। আশপাশের লোকজন, চলতি পথের লোকজন যে যেভাবে পারছেন উত্তম-মাধ্যম দিতে থাকেন মোবাইল নেয়া যুবককে। পরে পল্টন মোড়ে দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক পুলিশ এসে ছিনতাইকারী উদ্ধার করে।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছিনতাইয়ের শিকার মেয়েটি মাকে নিয়ে নিউমার্কেট যাচ্ছিলেন। হেডফোনে কথা বললেও হঠাৎ ফোন আসায় ব্যাগ থেকে মোবাইলটি বের করা মাত্রই ওৎপেতে থাকা ছিনতাইকারী আচমকাই সেটি থাবা দিয়ে নিয়ে সটকে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে বাস থেকে নেমে পড়েন মেয়েটির মা। পেছনে বিআরটিসির আরেকটি বাস থেকে ছিনতাইয়ের দৃশ্য দেখে দ্রুত নেমে আসেন সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আশরাফুল ইসলাম।

ঢাকা মেইলকে আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমার পুরো চোখটাই কেন যেন সামনের বাসের জানালায় ছিল। যখন দেখলাম মোবাইলটা নিয়ে লোকটা দ্রুত চলে যাচ্ছে তখন আর বসে থাকতে পারলাম না। ফলো করতে করতে দেখি ছিনতাইকারী সামনে ট্রান্সসিলভা পরিবহনের একটা বাসে উঠে পড়েছে। বাসে উঠে ধরে ফেললাম ওকে। সঙ্গে সঙ্গে ফোন হারানো মেয়েটির মাও আসেন।

ধরে ফেলার পর ছিনতাইকারী ধারালো একটি জিনিস দিয়ে শরীরে আঘাত করার চেষ্টা করেছে জানিয়ে এই শিক্ষার্থী বলেন, ভালো করে আঘাত করতে পারলে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে যেত। আল্লাহ রহমত করেছেন। এরপর আর নিজেকে স্থির রাখতে পারিনি। বাস থেকে নামানোর পর লোকজন গণধোলাই দিয়েছে। পরে পুলিশ এসে তাকে নিয়ে গেছে।

এদিকে ঘটনাস্থলে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ছিনতাইকারীকে আমরা উদ্ধার করে পাশে বক্সে আটকে রেখেছি। থানা পুলিশের কাছে দেওয়ার পর তারা ব্যবস্থা নেবে।

নিশ্চিত খোয়া যাওয়া ফোন ফিরে পেয়ে খুশি হলেও এমন ঘট্নায় বেশ ক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থী ও তার মা। তারা বলেন, এমন করে যদি রাস্তায় বের হলে ফোন খোয়া যায় তাহলে আমরা কোথায় যাব? এই ধরনের কাজ যারা করবে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ফোন উদ্ধার করতে সহযোগিতা করার জন্য আশরাফুল ইসলামকে ধন্যবাদ জানান ফোন হারানো সেই শিক্ষার্থী ও তার মা।

কথা বললেই মামলার সংখ্যা বাড়ে, আদালতে এসে যা জানালেন ‘পলক’

দুদকের মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে এসে সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, ‘কথা বললেই মামলার সংখ্যা বাড়ে। পেছনে হ্যান্ডকাফ দিয়ে রাখে। কথা বলে কী লাভ?’

সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশনের করা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা মামলায় হাজিরা দিতে এসে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন তিনি। এদিন বেলা ১টা ৫০ মিনিটের দিকে তাকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে উপস্থিত করে হাজতখানায় রাখা হয়।

এ সময় পলকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তরিকুল ইসলাম বলেন, জুনাইদ আহমেদ পলককে নিয়মিতই বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে আনা হচ্ছে। এতে তিনি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছেন। এছাড়াও তার দুইহাত পিছমোড়া করে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে আনা হচ্ছে। এগুলো সাধারণত দাগী আসামিদের ক্ষেত্রে করা হয়।

পলকের বিরুদ্ধে হওয়া দুদকের মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে সমন্বিত ঢাকা জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি করেন।

মামলায় বলা হয়, অভিযুক্ত জুনাইদ আহমেদ পলক অবৈধ উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৪৭ হাজার ৪২ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে তা ভোগদখলে রেখেছেন।

একইসঙ্গে নিজ নামে ২৫টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৩২ কোটি ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৩১৪ টাকা জমা এবং ২৯ কোটি ৮৪ লাখ ৭২ হাজার ৯৫ টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অস্বাভাবিক লেনদেন করে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে মানিলন্ডারিংয়ের অপরাধ সংঘটন করেছেন।

মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

গত ১৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর খিলক্ষেত থানাধীন নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় জুনায়েদ আহমেদ পলককে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। এরপর থেকে বিভিন্ন মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে দফায় দফায় রিমান্ডে নেয়া হয়। বর্তমানে তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক আছেন।

‘পায়ুপথ’ দিয়েও বন্দীরা মোবাইল নিয়ে যাচ্ছে, অবাক করা তথ্য জানালেন কারা মহাপরিদর্শক

কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন এনডিসি জানিয়েছেন, বর্তমানে ৭০০-এর অধিক বন্দী পলাতক অবস্থায় রয়েছে এবং এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি।

তিনি আরও জানান, জঙ্গি ও বিশেষ বন্দীদের মধ্যে ৭০ জনের মধ্যে ১ জন গ্রেফতার হয়েছে, বাকি ৬৯ জন এখনও পলাতক রয়েছেন।

মোবাইল ফোন সম্পর্কিত অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আপনারা যে মোবাইল ফোনটি দেখছেন, তা খুবই ছোট।

আমরা বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, তবে অনেক সময় আমরা পেয়েছি যে, বন্দীরা নিজের শরীরের ভিতরে মোবাইল ফোন নিয়ে আসে। বডি স্কেনার অথবা পায়ু পথে মোবাইল ফোন নিয়ে আসা হয়, যা শনাক্ত করতে অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হয়।”

এছাড়া, তিনি অনুরোধ করেছেন যে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন অবৈধ মোবাইল ফোনের বাজার বন্ধ করে দেয় এবং এই ধরনের অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধ করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

শ্যামলীতে নারীদের পেটানো সেই যুবক গ্রেফতার

রাজধানীর শ্যামলী এলাকায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা নারীদের পেটানো সেই রাসেল হোসেনকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। সোমবার (১০ মার্চ) সন্ধ্যায় মতিঝিল এলাকা থেকে তাকে ডিবির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, রাসেল শ্যামলী স্কয়ার এলাকায় নারীদের উদ্দেশে অবমাননাকর মন্তব্য করেন এবং সহিংস আচরণ করেন। পরে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।

ভিডিওতে রাসেল হোসেনকে লাঠি হাতে রাস্তায় নারীদের দৌড়ে দৌড়ে পেটাতে দেখা যায়। গ্রেপ্তারকৃত রাসেলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানা গেছে।