কাকরাইল মসজিদে সাদপন্থীদের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা সরকার

দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের মাঝে এবার তাবলিগের সাদপন্থী এবং বিরোধী পক্ষ শূরাপন্থীদের জন্য নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। চলমান উত্তেজনা নিরসনে সাদপন্থী হিসেবে পরিচিত মাওলানা সাদের অনুসারীদের কাকরাইল মসজিদে সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর কাকরাইল মসজিদের আশপাশে

বড় জমায়েত করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে শূরাপন্থীদের। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব ইসরাত জাহান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এই নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদেশে বলা হয়, আগামীকাল (২৭ ডিসেম্বর) শুক্রবার কাকরাইল মসজিদের আশপাশে মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়েরের অনুসারীদের কোনো রকমের বড় জমায়েত হতে বিরত থাকার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তাবলিগ জামাতের সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ ও মসজিদের আশপাশের এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন শূরাপন্থীরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কাকরাইল মসজিদের ভেতরেই ছোট আকারে অবস্থান করতে দেখা গেছে তাদের।

সাদপন্থীদের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তাবলিগ জামাতের মাওলানা সাদ গ্রুপের অনুসারীদের আগামীকাল (২৭ ডিসেম্বর) শুক্রবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কাকরাইল মসজিদে শবগুজারিসহ (রাত্রিযাপন) সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

আদেশ জারির পর কাকরাইল মসজিদ প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলন করেন শূরাপন্থীরা। এ সময় এই পক্ষের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, ‘আমরা চাই দেশে আর কোনো অরাজক পরিস্থিতি তৈরি না হোক।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর সাদপন্থীরা টঙ্গী ময়দানে যে নির্মম হামলা চালিয়েছে এবং গত ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ সেটার পুনরাবৃত্তি করেছে, তখনো প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপন ছিল। আমরা এসব ঘটনার উপযুক্ত বিচার চাই।’

শুক্রবার সকালে সাদপন্থীরা কাকরাইলে আসতে চাইলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে কি না জানতে চাইলে রায়হান বলেন, ‘এটা প্রশাসন দেখবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংঘাত যেন না ঘটে সে কারণে প্রশাসন আদেশ জারি করেছে। এই আদেশের পর আশা করি, আইনশৃঙ্খলার কোনো অবনতি ঘটবে না।’

সরকারের তিন উপদেষ্টাকে হুশিয়ারি করে যা বললেন ‘সারজিস আলম’

অন্তর্বর্তী সরকারের তিন তরুণ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমকে বিপ্লবী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে বললেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মূখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি এ আহ্বান জানিয়েছেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অন্যতম এই নেতা লিখেছেন, সাবধান করার সময় আর নাই। নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম ভাই, বিপ্লবী ভূমিকায় অবতীর্ণ হোন। পুরো বাংলাদেশে আপনাদের সঙ্গে আছে। সারজিস আলম লিখেছেন, রাষ্ট্র সংস্কার করতে হলে সবার আগে আমলাতন্ত্র ও প্রশাসনে যেসব চাটার দল এখনো ঘাপটি মেরে লুকিয়ে

আছে তাদের শেকড় থেকে উপড়ে ফেলতে হবে।  বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের যারা চাটার দল ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম স্টেকহোল্ডার ছিল আমলাদের বৃহৎ একটা অংশ, এমন দাবি করে সারজিস বলেন,

এদের উপর ভর দিয়েই হাসিনা এ দেশে তার ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল। যখনই বিপ্লবীরা হাসিনার অপকর্ম, চুরি, লুটপাট, দুর্নীতির দিকে নজর দিয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে,

তখনই সচিবালয়ে ঘাপটি মেরে থাকা হাসিনার দালালেরা বিভিন্ন অপকর্মের ফাইলগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে দিল। প্রসঙ্গত, বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ে আগুন লাগার সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস।

আগুনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে ১৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করেন

পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। প্রাথমিক পর্যায়ে আগুন লাগার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। এরপর সচিবালয় এলাকায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

জুলাই-আগস্ট ‘আন্দোলনে আশুলিয়ায় একজনকে জীবিত পুড়িয়ে মেরেছে পুলিশ’

জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকার আশুলিয়ায় একজনকে জীবিত পুড়িয়ে মেরেছে পুলিশ বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত ছয় শিক্ষার্থীর মরদেহ পেট্রল ঢেলে পোড়ানো হয়। এদের মধ্যে একজন জীবিত ছিল। জীবিত থাকা অবস্থায় তার গায়ে পেট্রল লাগিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে সাংবাদিকদের কাছে তিনি একথা বলেন। তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই-আগস্টের নৃশংসতম ঘটনাগুলো নিয়ে তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশন টিম খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। বর্বরতম ঘটনাগুলোকে আমরা প্রায়োরিটি দিচ্ছি।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আমাদের তদন্ত সংস্থা তদন্ত করে বের করেন যে গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয়জন ছাত্রকে ঠান্ডা মাথায় খুন করে। পরে লাশগুলোকে ভ্যানগাড়ির ওপর একটার পর একটা রেখে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। পরে এ লাশগুলোকে আরেকটি পুলিশভ্যানের ওপর ছুড়ে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল। সেই সরকারের পক্ষে তারা সর্বোচ্চ নৃশংসতম আচরণ করেছিল।

তিনি বলেন, পুলিশভ্যানে উঠিয়ে সেই লাশগুলোর ওপর পেট্রল ঢেলে দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে আগুন লাগানো হয়। এ ঘটনায় আমরা প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, লাশগুলোকে পুড়িয়ে ফেলার জন্য আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাজুল বলেন, এদের মধ্যে একজন জীবিত ছিল। জীবিত থাকা অবস্থায় তার গায়ে পেট্রল লাগিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

‘এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশে পুলিশ বাহিনী ঘটিয়েছে। নৃশংসতার প্রমাণ এটা’—যোগ করেন চিফ প্রসিকিউটর। তিনি আরও বলেন, এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে যে ব্যক্তি বা যারাই জড়িত ছিল তাদের মধ্যে দুজনকে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে একজন হচ্ছে মুকুল চকদার।

তাকে গ্রেফতারের জন্য আমরা আদালতে ওয়ারেন্ট চেয়েছিলাম। আদালত ওরেন্ট জারি করেছিল। সে অনুযায়ী গতকালকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় আরও একজন পুলিশ সদস্য মালেককে গতকাল কিশোরগঞ্জ থেকে গ্রেফতার হয়েছে। যেহেতু গতকাল ছুটি ছিল এজন্য তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ওখানকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।

মালেক এখন কিশোরগঞ্জে আটক আছেন জানিয়ে তাজুল বলেন, তার মামলার নথি যথাযথভাবে ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। তাকে এ মামলায় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হবে। তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশন টিম মিলে আমরা কাজ করছি। খুব দ্রুতই আমরা এ তদন্ত গুছিয়ে আনব এবং তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করব।

আমরা খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া করতে পারব।

সচিবালয়ে আগুন প্রসঙ্গে যা বললো ‘আওয়ামী লীগ’

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে ভবনের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলা পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে, এর আগেই আগুনে সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনের ৬ থেকে ৯ তলা পর্যন্ত

চারটি ফ্লোর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সচিবালয়ে এই অগ্নিকাণ্ড সাধারণ দুর্ঘটনা বলে মেনে নেওয়া যায় না বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। আগ্নিকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগ তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে এমন মন্তব্য করেছে দলটি।

আওয়ামী লীগ বলছে, দেশের প্রশাসনিক হৃৎপিণ্ড সচিবালয়। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কোনোভাবেই সাধারণ দুর্ঘটনা বলে মেনে নেওয়া যায় না। বিশেষ করে যখন ঘটনাটি ৭ নম্বর ভবনে ঘটে, যেখানে দুই ছাত্র উপদেষ্টাদের অফিস এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সংরক্ষিত ছিল।

৬ ঘণ্টা ধরে আটটি মন্ত্রণালয়ের অংশ পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টারা সেখানে আসেননি বলে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ। তবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন যুব ক্রীড়া, ডাক টেলিযোগাযোগ, গণপূর্ত, সমাজকল্যাণ, স্বরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা। পরিদর্শনকালে সচিবালয়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন তারা।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে নৌবাহিনী, সেনাবাহিনীও। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। সচিবালয়ে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটটি আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করে রাত ১টা ৫৪ মিনিট থেকে। আগুনের তীব্রতা বেড়ে গেলে একে একে ১৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে।

শুরুতে আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য ৮টি ইউনিট কাজ করলেও পরে আরও ১১টি ইউনিট যুক্ত হয়। সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলায় ছড়িয়ে পড়ে আগুন। তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ বা ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। তবে ৭ নম্বর ভবনে থাকা নথিপত্র পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সচিব নিবাসেও আগুন

রাজধানীর ইস্কাটন এলাকায় সচিব নিবাসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাত ৮টার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিন দেশের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ফায়ার সার্ভিসের

মিডিয়া সেলের ডিউটি অফিসার রোজিনা আক্তার। তিনি বলেন, বুধবার রাত ৮টার দিকে আমাদের কাছে সংবাদ আসে ইস্কাটন গার্ডেন রোডে অবস্থিত সচিব নিবাসের ২০ তলা ভবনের ৪ তলার একটি বাসার রান্নাঘরে আগুন লেগেছে। পরে ঘটনাস্থলে সিদ্দিক বাজার ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। এই আগুনে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এদিকে বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত ১টা ৫২ মিনিটে বাংলাদেশ সচিবালয়ে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায় বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

এই ভবনে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, তথ্য প্রযুক্তি, শ্রম ও কর্মসংস্থান, যুব ও ক্রীড়া, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, সড়ক পরিবহন সেতু বিভাগ রয়েছে।

সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের জন্য সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীমকে। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসন ও শৃঙ্খলা শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ইমরান হোসেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

কমিটিতে আহ্বায়ক ছাড়া সদস্য হিসেবে যারা থাকবেন তারা হলেন- জননিরাপত্তা বিভাগের প্রতিনিধি (যুগ্মসচিব পদমর্যাদার নিচে নয়), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (যুগ্মসচিব পদমর্যাদার নিচে নয়), স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিনিধি (যুগ্মসচিব পদমর্যাদার নিচে নয়), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিনিধি

এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের একজন প্রতিনিধি। এছাড়া সদস্য-সচিব হিসেবে থাকবেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি (যুগ্মসচিব পদমর্যাদার নিচে নয়)। কমিটির কার্যপরিধি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এই কমিটি সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের ‘উৎস ও কারণ’ উদ্ঘাটন; অগ্নিদুর্ঘটনার পেছনে কারও

ব্যক্তিগত বা পেশাগত দায়দায়িত্ব আছে কি না, তা উদঘাটন এবং এ জাতীয় দুর্ঘটনা প্রতিরোধকল্পে সুপারিশ প্রণয়ন করবেন। কমিটি আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদান করবে বলে অফিস আদেশে জানানো হয়।

দরিদ্র বাবা-মায়ের একমাত্র অবলম্বন ছিলেন ফায়ার ফাইটার ‘নয়ন’

সচিবালয়ে আগুন নেভানোর কাজে গিয়ে ট্রাকচাপায় নিহত ফায়ার ফাইটার সোহানুর জাহান নয়ন ছিলেন পরিবারের একমাত্র অবলম্বন। কৃষক বাবা আক্তারুজ্জামানের সব ভরসা ছিল তাকে ঘিরেই।

অনেক স্বপ্ন ছিল ছেলের চাকরি দিয়ে অনাগত দিনগুলো সুখে শান্তিতে কাটাবেন। কিন্তু সেই আশা পূরণ হওয়ার আগেই ঘাতক ট্রাক কেড়ে নিলো সব। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ছড়ান আটকুনিয়া গ্রামের আক্তারুজ্জামান ও নার্গিস দম্পতির একমাত্র ছেলে সোহানুর জাহান নয়ন। এক বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে ছোট নয়ন। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জিয়াউল হক জুয়েল জাগো নিউজকে জানান, নয়নের পরিবার নদীভাঙনের শিকার। নিজস্ব জমিজমা বলতে তেমন কিছু নেই। অনেক কষ্টে একমাত্র ছেলেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করিয়েছেন। ২০২২ সালে তার চাকরি হয়। ছেলের চাকরিতে পরিবারে একটু সচ্ছলতা ফিরতে শুরু করেছিল।

কিন্তু সেই সুখ বেশিদিন টিকলো না। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে এখন পরিবারটি দিশাহারা। ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা আক্তারুজ্জামান। শুধু বলেন, ‘বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ অনেক ভারী।
আমার অনেক স্বপ্ন ছিল তাকে ঘিরে। সবকিছু শেষ হয়ে গেলো।’

দরিদ্র বাবা-মায়ের একমাত্র অবলম্বন ছিলেন ফায়ার ফাইটার নয়ন এদিকে একমাত্র ছেলের শোকে পাগলপ্রায় মা নার্গিস আক্তার। ইউপি চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম সরকার বলেন, নয়নের পরিবার অনেক গরিব। এভাবে অকালে তার চলে যাওয়াটা কষ্টের। সরকারিভাবে ওই পরিবারের জন্য কিছু একটা করার জন্য জোর দাবি জানাই।

‘সচিবালয়ে আগুন পরিকল্পিত ঘটনা হতে পারে’

সচিবালয়ে লাগা আগুন পরিকল্পিত হতে পারে। কারণ আগুনটা লেগেছে ছয় তলা, নয় তলার পাশাপাশি মাঝেও৷ এভাবে বিভিন্ন স্থানে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন কখনো লাগে না। এটা পরিকল্পনা মাফিক হতে পারে বলে

মন্তব্য করেছেন নৌ-বাহিনীর সিনিয়র চিফ পেটি অফিসার (পিও) আমিনুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সচিবালয়ের ৭ নং ভবনে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তায় ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয় নৌ-বাহিনীর একটি টিমকে।

এসময় আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, যেখানে যেখানে আগুন লেগেছে সব পুড়ে গেছে। আমরা সব এখনো আইডেন্টিফাই করতে পারিনি, তবে করবো। আমাদের নৌ-বাহিনীর টিম এখানে আছে, কাজ করছে।

কেন মনে হচ্ছে এটা পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ড? জানতে চাইলে নৌ-বাহিনীর সিনিয়র চিফ পেডি অফিসার বলেন, শর্ট সার্কিটের আগুন লাগে এক জায়গা থেকে, সব জায়গায় একসঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে না। এই আগুন একসঙ্গে বিভিন্ন স্থানে লেগেছে।

সচিবালয়ের আগুন লাগা ভবনে যেসব মন্ত্রণালয় রয়েছে

রাজধানীতে বাংলাদেশ সচিবালয়ের একটি ভবনে আগুন লেগেছে। বুধবার রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে এই আগুন লাগে বলে জানা গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়সহ বিভাগের অফিস রয়েছে। এই ভবনে রয়েছে- পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ;

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। প্রথমে রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার খবর আসে। সচিবালয়ে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটটি আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করে রাত ১টা ৫৪ মিনিট থেকে।

এরপর আগুনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে ১৮ ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করছে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। প্রাথমিক পর্যায়ে আগুন লাগার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। এরপর সচিবালয় এলাকায় মোতায়েন করা হয় বিজিবি সদস্যদের।

তিন বাহিনীর সদস্যরা মিলে এখন সচিবালয় এলাকায় নিরাপত্তা দিচ্ছেন এবং ফায়ার সার্ভিসকে আগুন নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করছেন। ভোর পাঁচটার পর ফায়ার সার্ভিসের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্ট কড়া ভিডিওতে দেখা যায়, সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। বাইরে থেকেও আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছে।

আগুন লাগার পর তিন ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সচিবালয়ের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাকচাপায় ফায়ার সার্ভিস কর্মী নিহত

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে লাগা আগুন নেভানোর কাজ করতে গিয়ে ট্রাকচাপায় আহত হওয়া ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম সোহানুজ্জামান নয়ন।

আজ বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল পৌনে ৭টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহেদ কামাল ঘটনাস্থলে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের একজন সদস্য পানির পাইপ কাঁধে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি দ্রুতগামী ট্রাক পেছন থেকে তাকে ধাক্কা দিলে তিনি রাস্তায় পড়ে যান। পরে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক)

হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আরেক ফায়ার কর্মী পা কেটে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। তবে তার অবস্থা গুরুতর নয়। তিনি আরও জানান, নিহত ফায়ার ফাইটারের নাম সোহানুজ্জামান নয়ন। তিনি তেজগাঁও ফায়ার টিমের স্পেশাল

ব্রাঞ্চের সদস্য। দুই বছর যাবত ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত রয়েছেন। নয়নের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুরে। সেখান থেকে মরদেহ বুঝে নিতে রওনা দিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।

এদিকে, এই ফায়ার সার্ভিস কর্মীকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়া অভিযুক্ত ট্রাকচালককে শিক্ষার্থীরা আটক করেছে বলে জানা গেছে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়।

দুই দুইবার বোরখা পরে পালিয়েছে নারায়ণগঞ্জের ‘শামীম ওসমান’

বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও নিবন্ধন স্থগিত করতে হবে বলে দাবি করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। আজ বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নে মহান

মুক্তিযুদ্ধে ও ২৪ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে দোয়া ও আলোচনাসভায় তিনি এ কথা বলেন। গণঅধিকার পরিষদ, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা শাখার উদ্যোগে এই দোয়া ও আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়।

তিনি বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ গণহত্যার মাস্টারমাইন্ডরা কিভাবে পালাল? এসবের তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে সরকারকে। এদের পলায়নে সহায়তাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সভায় রাশেদ খান বলেন, নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত শামীম ওসমান দুই দুইবার বোরখা পরে পালিয়েছে। এরা নারায়ণগঞ্জের ত্রাস ছিল। নারায়ণগঞ্জের বিপ্লবী জনতা এদের লাথি মেরে বিতাড়িত করেছে। আওয়ামী লীগের নেতারা বাংলাদেশকে নিজেদের দেশ

মনে করে না, এদের আসল দেশ হলো ভারত। কিন্তু সেই ভারতও এদের রক্ষা করতে পারেনি। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমেই এদের পরাজয় নিশ্চিত হয়েছে। গণ অধিকার পরিষদের এই শীর্ষ নেতা প্রশ্ন রেখে বলেন,

কেন এখনো আওয়ামী লীগের অপরাধী, হাইকমান্ড ও শেখ পরিবারকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? ৩০০ ডামি এমপির বিষয়ে সরকারের অবস্থান কি? কেন এখনও তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও দুদকের মাধ্যমে পাকড়াও করা হচ্ছে না?