সরকারের তিন উপদেষ্টাকে হুশিয়ারি করে যা বললেন ‘সারজিস আলম’

অন্তর্বর্তী সরকারের তিন তরুণ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমকে বিপ্লবী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে বললেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মূখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি এ আহ্বান জানিয়েছেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অন্যতম এই নেতা লিখেছেন, সাবধান করার সময় আর নাই। নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম ভাই, বিপ্লবী ভূমিকায় অবতীর্ণ হোন। পুরো বাংলাদেশে আপনাদের সঙ্গে আছে। সারজিস আলম লিখেছেন, রাষ্ট্র সংস্কার করতে হলে সবার আগে আমলাতন্ত্র ও প্রশাসনে যেসব চাটার দল এখনো ঘাপটি মেরে লুকিয়ে

আছে তাদের শেকড় থেকে উপড়ে ফেলতে হবে।  বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের যারা চাটার দল ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম স্টেকহোল্ডার ছিল আমলাদের বৃহৎ একটা অংশ, এমন দাবি করে সারজিস বলেন,

এদের উপর ভর দিয়েই হাসিনা এ দেশে তার ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল। যখনই বিপ্লবীরা হাসিনার অপকর্ম, চুরি, লুটপাট, দুর্নীতির দিকে নজর দিয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে,

তখনই সচিবালয়ে ঘাপটি মেরে থাকা হাসিনার দালালেরা বিভিন্ন অপকর্মের ফাইলগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে দিল। প্রসঙ্গত, বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ে আগুন লাগার সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস।

আগুনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে ১৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করেন

পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। প্রাথমিক পর্যায়ে আগুন লাগার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। এরপর সচিবালয় এলাকায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

জুলাই-আগস্ট ‘আন্দোলনে আশুলিয়ায় একজনকে জীবিত পুড়িয়ে মেরেছে পুলিশ’

জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকার আশুলিয়ায় একজনকে জীবিত পুড়িয়ে মেরেছে পুলিশ বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত ছয় শিক্ষার্থীর মরদেহ পেট্রল ঢেলে পোড়ানো হয়। এদের মধ্যে একজন জীবিত ছিল। জীবিত থাকা অবস্থায় তার গায়ে পেট্রল লাগিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে সাংবাদিকদের কাছে তিনি একথা বলেন। তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই-আগস্টের নৃশংসতম ঘটনাগুলো নিয়ে তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশন টিম খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। বর্বরতম ঘটনাগুলোকে আমরা প্রায়োরিটি দিচ্ছি।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আমাদের তদন্ত সংস্থা তদন্ত করে বের করেন যে গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয়জন ছাত্রকে ঠান্ডা মাথায় খুন করে। পরে লাশগুলোকে ভ্যানগাড়ির ওপর একটার পর একটা রেখে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। পরে এ লাশগুলোকে আরেকটি পুলিশভ্যানের ওপর ছুড়ে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল। সেই সরকারের পক্ষে তারা সর্বোচ্চ নৃশংসতম আচরণ করেছিল।

তিনি বলেন, পুলিশভ্যানে উঠিয়ে সেই লাশগুলোর ওপর পেট্রল ঢেলে দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে আগুন লাগানো হয়। এ ঘটনায় আমরা প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, লাশগুলোকে পুড়িয়ে ফেলার জন্য আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাজুল বলেন, এদের মধ্যে একজন জীবিত ছিল। জীবিত থাকা অবস্থায় তার গায়ে পেট্রল লাগিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

‘এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশে পুলিশ বাহিনী ঘটিয়েছে। নৃশংসতার প্রমাণ এটা’—যোগ করেন চিফ প্রসিকিউটর। তিনি আরও বলেন, এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে যে ব্যক্তি বা যারাই জড়িত ছিল তাদের মধ্যে দুজনকে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে একজন হচ্ছে মুকুল চকদার।

তাকে গ্রেফতারের জন্য আমরা আদালতে ওয়ারেন্ট চেয়েছিলাম। আদালত ওরেন্ট জারি করেছিল। সে অনুযায়ী গতকালকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় আরও একজন পুলিশ সদস্য মালেককে গতকাল কিশোরগঞ্জ থেকে গ্রেফতার হয়েছে। যেহেতু গতকাল ছুটি ছিল এজন্য তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ওখানকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।

মালেক এখন কিশোরগঞ্জে আটক আছেন জানিয়ে তাজুল বলেন, তার মামলার নথি যথাযথভাবে ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। তাকে এ মামলায় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হবে। তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশন টিম মিলে আমরা কাজ করছি। খুব দ্রুতই আমরা এ তদন্ত গুছিয়ে আনব এবং তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করব।

আমরা খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া করতে পারব।

দুই দুইবার বোরখা পরে পালিয়েছে নারায়ণগঞ্জের ‘শামীম ওসমান’

বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও নিবন্ধন স্থগিত করতে হবে বলে দাবি করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। আজ বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নে মহান

মুক্তিযুদ্ধে ও ২৪ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে দোয়া ও আলোচনাসভায় তিনি এ কথা বলেন। গণঅধিকার পরিষদ, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা শাখার উদ্যোগে এই দোয়া ও আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়।

তিনি বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ গণহত্যার মাস্টারমাইন্ডরা কিভাবে পালাল? এসবের তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে সরকারকে। এদের পলায়নে সহায়তাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সভায় রাশেদ খান বলেন, নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত শামীম ওসমান দুই দুইবার বোরখা পরে পালিয়েছে। এরা নারায়ণগঞ্জের ত্রাস ছিল। নারায়ণগঞ্জের বিপ্লবী জনতা এদের লাথি মেরে বিতাড়িত করেছে। আওয়ামী লীগের নেতারা বাংলাদেশকে নিজেদের দেশ

মনে করে না, এদের আসল দেশ হলো ভারত। কিন্তু সেই ভারতও এদের রক্ষা করতে পারেনি। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমেই এদের পরাজয় নিশ্চিত হয়েছে। গণ অধিকার পরিষদের এই শীর্ষ নেতা প্রশ্ন রেখে বলেন,

কেন এখনো আওয়ামী লীগের অপরাধী, হাইকমান্ড ও শেখ পরিবারকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? ৩০০ ডামি এমপির বিষয়ে সরকারের অবস্থান কি? কেন এখনও তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও দুদকের মাধ্যমে পাকড়াও করা হচ্ছে না?

দ্রুত নির্বাচন না দিলে মাঠে নামব বলে হুঙ্কার দিলেন বিএনপির নেতা

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ না হলে বাংলাদেশ নামে কোনো দেশ সৃষ্টি হত না। মুক্তিযুদ্ধের পেট থেকেই বাংলাদেশ বের হয়েছে। যারা বাংলাদেশ মানে না,

মুক্তিযুদ্ধ যারা মানে না, তারা বাংলাদেশের মানুষ না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ হাজার বছরে বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন। গতকাল মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা ইটনায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত বিজয়ের মাস

উপলক্ষে আয়োজিত বিজয় উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে ফজলুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচিত সরকারের আয়ু যদি পাঁচ বছর হয়, অনির্বাচিত

সরকারের আয়ু তিন থেকে ছয় মাস হতে পারে। ইলেকশনের কথা কইলে মুখ কালা করেন কেন? যদি আপনারা নির্বাচন করতে চান, দল করেন—আপনাদের অভিনন্দন জানাবো। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন হবে।

আমরা নির্বাচনের জন্য অনন্তকাল অপেক্ষা করব না। দ্রুত নির্বাচন দিন, নইলে নির্বাচন আদায়ে মাঠে নামব আমরা।’
দেশে এবারের বিজয় দিবসে উৎসব বা বিজয় মেলা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপি এই নেতা বলেন, ‘

এবার তো বিজয়ের আনন্দ বেশি হওয়ার কথা ছিল। এত নীরবে-নিভৃতে কেন বিজয়ের মাস চলে যাবে? এটা আমি সহ্য করিনি, মুক্তিযোদ্ধারা সহ্য করেনি, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা সহ্য করেনি।

জিয়াউর রহমানের সৈনিকেরাও সহ্য করেনি। এ কারণে হাওরে এই বিজয় উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে দেশের সর্বনাশ করেছেন, নিজের সর্বনাশ

করেছেন, তার পিতাকে ডুবিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। গত ১৫ বছর দেশে কোনো মানুষের শাসন ছিল না। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু বীর প্রতীককে জুতার মালা

পরিয়ে লাঞ্ছনার প্রসঙ্গে দুঃখপ্রকাশ করে অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমি জানি না আমার মৃত্যুর আগে আর কী কী দেখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী দলের লোকেরাই এ অপকর্মটি করেছে। আমাদের মনে রাখতে হবে একাত্তরে সাড়ে সাত কোটি

মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করেছেন। ৩০ লাখ লোক জীবন দিয়েছেন। ২ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমান অবদান প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা

দিয়েছিলেন। যারা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক মানে না, তারা স্বাধীনতা মানে কি-না আমার সন্দেহ রয়েছে। তিনি শুধু স্বাধীনতার ঘোষকই ছিলেন না, তিনি রণাঙ্গন থেকে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’

বিজয় উৎসবে জেলার তিন হাওর উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের ৭২জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা দেওয়া হয়। তাদের ক্রেস্ট ও ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। আলোচনা পর্ব শেষে রাতে উৎসবের সাংস্কৃতিক পর্বে কণ্ঠশিল্পী সালমা,

আশিক ও শাহনাজ বাবুসহ স্থানীয় শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। মধ্যরাত পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ তাদের পরিবেশনা উপভোগ করেন। ইটনা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিজয় উৎসবের

আলোচনা পর্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন- জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সহসভাপতি অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম রেখা ও অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাইল মিয়া ও আমিনুল ইসলাম আশফাক।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন- ইটনা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. সিদ্দিকুজ্জামান ঠাকুর স্বপন, সহসভাপতি মো. মনির উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পলাশ রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. তারিকুল ইসলাম জুয়েল,

মিঠামইন উপজেলা বিএনপি সভাপতি জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীর, অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএনপি সভাপতি সৈয়দ সাঈদ আহমেদ, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সুমন, জেলা মহিলা দলের সভাপতি জেসমিন সুলতানা কবিতা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবু নাসের সুমন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা হাফিজুল্লাহ হীরা প্রমুখ।

হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বন্দি বিনিময় চিঠি পেয়ে যা বললেন সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত

শিক্ষার্থী-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তাকে ফেরত দিতে ইতোমধ্যে নয়াদিল্লিকে চিঠি দিয়েছে ঢাকা, নয়াদিল্লি সেই চিঠির প্রাপ্তিস্বীকারও করেছে। গণআন্দোলন দমনে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মানুষ হত্যার নির্দেশ প্রদানের অভিযোগে ইতোমধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সারা দেশে শতাধিক মামলা হয়েছে।

তিনি দেশে ফিরে এলেই তাকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একাধিকবার প্রকাশ্যে এই ঘোষণা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হাসিনা কী করতে পারেন— সে সম্পর্কিত পরামর্শ তাকে দিয়েছেন বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত মহেশ সাচদেব। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাচদেব বলেন,

“বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তিটি রয়েছে, সেটি অনেক সতর্কভাবে করা। এ চুক্তিটি রাজনৈতিক ইস্যুতে প্রত্যপর্ণ প্রত্যাখ্যান করে, কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে ফোকাস করে। তো, এখন চুক্তির এসব সতর্কতা ব্যবহার করা যেতে পারে। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির বর্তমান সরকারের প্রত্যর্পণের অনুরোধের বিরুদ্ধে ভারতের আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন।

আদালতে তিনি লিখিতভাবে আবেদন জানাতে পারেন যে, ভারতের সরকার তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠালে তার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হবে।” “আবার ভারত বাংলাদেশের সরকারকে জানাতে পারে যে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানো হলে তার সঙ্গে ন্যায়বিচার হবে কি না— সে সম্পর্কে নিশ্চিত নয় তারা। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে ভারতের অনেক তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আছে এবং

নয়াদিল্লির বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে ইউরোপ বলেছে, ভারতের বিচার ব্যবস্থা ও কারাগারগুলোর মান নিয়ে তাদের সংশয় রয়েছে। তো এখন এ পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে।” বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্দি প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত প্রথম খসড়া ‍চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৩ সালে। পরে ২০১৬ সালে চুক্তিটির সংশোধিত সংস্করণে স্বাক্ষর করে নয়াদিল্লি এবং ঢাকা।

মূলত দুই দেশের সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদে সংশ্লিষ্টদের বিনিময়ের উদ্দেশ্যেই চুক্তিটি স্বাক্ষর করেছিল ভারত এবং বাংলাদেশ। সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে নয়াদিল্লিকে কূটনৈতিক নোট প্রদান করা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই নোট গ্রহণ করেছে বলে গতকাল সোমবার জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।

এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে মহেশ সাচদেব বলেন, “প্রথমত, কূটনৈতিক নোট হলো দুই দেশের সরকারের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ের যোগাযোগ মাধ্যম। এটি কেবল একটা নথিগত রেকর্ড। এটা অনেকটা এমন…মনে করুন আপনি অন্য কোনো দেশে কোনো সঙ্গিত কনসার্ট বা টুর্নামেন্ট উপভোগ করতে গেছেন, সেখানে হয়তো কোনো কিছু আপনার ভালো লাগল না এবং সেই ভালো না লাগার ব্যাপারটি আপনি সেই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানালেন। দুই দেশের সরকারের যোগাযোগের জন্য এর চেয়ে উচ্চতর অনেক পন্থা বা মাধ্যম রয়েছে।”

বাংলাদেশে এই মুহূর্তে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার পুরোভাগে রয়েছে শেখ হাসিনার অবস্থান। প্রতিবেশী দেশ ভারতের জন্যও ব্যাপারটি অস্বস্তিকর। তবে মহেশ সাচদেব মনে করেন, বাংলাদেশ যদি অপেক্ষাকৃত উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক পন্থা অনুসরণ করে শেখ হাসিনাকে ফেরত চায়, তাহলেও কিছু অনতিক্রম্য কূটনৈতিক জটিলতার কারণে ভারতের পক্ষে সেই অনুরোধ রাখা কঠিন হবে।

“কিছুদিন আগে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশ সফরে গিয়েছিলেন। আমার ধারণা, তার সেই সফরে এ ব্যাপারগুলো আলোচনা হয়েছে। তারপরও আমি বলছি— বাংলাদেশ যে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইছে— এটা তো নতুন নয়, গত আগস্টে বাংলাদেশে সরকার পতন এবং নতুন সরকার গঠনের পর থেকে দু’দেশের মধ্যেই ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এখানে যে ব্যাপারটি লক্ষ্যনীয়, তা হলো শেখ হাসিনার ভারতে আসার

অনুমতি চেয়েছিল বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে। অর্থাৎ, দুই দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে তিনি এসেছিলেন। আমার মনে হয় যে বাংলাদেশের সরকারে বর্তমানে এমন কিছু মানুষ রয়েছেন, যারা তাদের হৃদয়ের কথা শুনতে ইচ্ছুক নন। কারণ তারা খুব ভালো করেই জানেন যে হাসিনা এই মুহূর্তে বাংলাদেশে গেলে সেখানে চরম অরাজকতা শুরু হবে।”

ভারতে শেখ হাসিনা কতদিন অবস্থান করবেন, সে ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নয়াদিল্লি নেয়নি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শেখ হাসিনা, তবে এখন পর্যন্ত এই গুঞ্জনের পক্ষে নিশ্চিত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সাবেক এই ভারতীয় রাষ্ট্রদূত এএনআইকে বলেন, “আমার মনে হয় তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবেন। যদি তিনি আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেন, সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে নয়াদিল্লি; আর এক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। অর্থাৎ, কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আবেদন করতে হবে— এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই…অন্তত আমি যদ্দুর জানি। আর এ কথা তো আমরা সবাই জানি যে তিনি যখন

ঢাকা ছেড়ে এসেছিলেন, সে সময় তাকে অস্থায়ীভিত্তিতে আশ্রয় দিয়েছিল ভারত। কারণ তখন ধারণা করা হয়েছিল, শিগগিরই ভারত থেকে অন্য কোনো দেশে তিনি চলে যাবেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চেয়ে আবেদনও করেছিলেন, কিন্তু দু’দেশই তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। এ কারণেই তিনি এখানে রয়েছেন।”

“কিন্তু এখন যেহেতু তিনি এখানে রয়েছেন, তাকে যদি আমরা বহিষ্কার করি— সেক্ষেত্রে তা খুবই অনৈতিক একটি কাজ হবে।”

“আর রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সরকারপ্রধানদের নিজ দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হওয়ার ঘটনা তো নতুন কিছু নয়। এই চলতি মাসেই সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ নিজ দেশ ছেড়ে রাশিয়ায় গিয়েছেন এবং রাশিয়া তাকে বিনা বাক্যব্যয়ে আশ্রয় দিয়েছে। এখন পর্যন্ত মস্কো আসাদকে এ ব্যাপারে একটি প্রশ্নও করেনি।”

“আমি শুনেছি তারা (বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার) আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) হাসিনাকে গ্রেপ্তারের জন্য পরোয়ানা জারির আবেদন করেছে। আইসিসি পরোয়ানা জারি করেও ফেলতে পারে, তবে আমাদের মনে রাখা উচিত যে পুতিন এবং বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধেও কিন্তু আইসিসি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে এবং আইসিসির পরোয়ানা মাথায় নিয়েই তারা তাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।”

“আসলে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, তাতে কাগজপত্র বা নথি বড় কোনো নির্ধারকের ভূমিকায় নেই। এমন বহু ব্যাপার এখানে রয়েছে যেসব চোখে দেখা যায় না, রাডারেও ধরা পড়ে না— সেসবই এই সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণের সবচেয়ে বড় নিয়ামক।”

আগামী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য অ্যাভেইলেবল ‘সাকিব-তামিম’

আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আর খুব বেশি দূরে নেই। আগামী ফেব্রুয়ারিতেই অনুষ্ঠিত হবে টুর্নামেন্টটি। যদিও ভারত এবং পাকিস্তানের সম্পর্কে টানাপোড়েনের কারণে টুর্নামেন্টের ভেন্যু জটিলতা ছিল। হাইব্রিড মডেলে হলেও সেই জটিলতা খানিকটা কমেছে এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে।

এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ দল কেমন হবে? ওয়ানডে ফরম্যাটে হওয়ার কারণে আইসিসির এই টুর্নামেন্টে খেলবেন তো সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবাল?

বিসিবির কার্যনির্বাহী কমিটির সভা শেষে আজ মিরপুরে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানালেন, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সিলেকশনের জন্য সাকিব এবং তামিম এভেইলেবল। অর্থ্যাৎ, কোনো ঝামেলা না থাকলে নির্বাচকরা এই দুই ক্রিকেটারকে বাংলাদেশ দলে রাখতে পারবেন।

সাকিব আল হাসান এরই মধ্যে টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন। ওয়ানডে থেকে অবসর না নিলেও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে আপাতত দলের বাইরে রয়েছেন। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের সময় তিনি ছিলেন আওয়ামীলীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য।

অন্যদিকে, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যায় ছিলেন পুরোপুরি নীরব। এ কারণে, দেশের মানুষের অধিকাংশই সাকিব দেশে ফিরে এসে বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলুক, তা চান না।

দেশের মাটিতে সর্বশেষ টেস্ট খেলে বিদায় নিতে চেয়েছিলেন সাকিব। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও কিছুটা নমনীয় হয়েছিলো; কিন্তু ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে রওয়ানা দিয়েও দেশে ফিরতে পারেননি। এরপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ দল ওয়ানডে খেললেও সাকিব সেখানে ছিলেন না।

এর ফলেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছিলো, বিসিবি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিবকে খেলাবে কি না? অন্যদিকে তামিম ইকবাল সম্পর্কেও মানুষ জানতে চান, তিনিও খেলবেন কি না। কারণ, তামিম এখনও অবসর নেননি। এক বছরেরও অধিক সময় দলের বাইরে। ফিরতে চান শর্ত সাপেক্ষে। চলমান এনসিএল টি-২০ টুর্নামেন্টেও তিনি দারুণ ব্যাটিং করেছেন।

সুতরাং, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তামিম খেলবেন কি না, সেটাও বড় একটি প্রশ্ন। আজ বিসিবি সভাপতিকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘যদি কোন খেলোয়াড় অবসর না নিয়ে থাকে, সে নির্বাচনের জন্য অবশ্যই অ্যাভেইলেবল।’ সাকিবকে নির্বাচকরা দলে নিতে চাইলে নিতে পারবেন, তবে তিনি যদি ব্যাক্তিগত কারণে না খেলেন, তাহলে সেটা ভিন্ন কথা।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সাকিব খেলেনি কেন, তা নিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আসলে এই ব্যাপারটা একদমই ভিন্ন ইস্যু। এটাতে আসলে নতুন করে কিছু নেই। শেষ যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ খেলেছি আমরা, সেখানে সে মানসিক অবস্থায় ছিল না খেলার মতো। যেতে পারেনি। এখন বলবে বিপিএল খেলবে কি আমার কাছে কোন আপডেট নেই তার ব্যাপারে।

তামিম সম্পর্কে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘তামিমেরটা আসলে প্রধান নির্বাচক যে কথা বলেছেন, এখনো কোনো পলিসি নেই। যদি কোনো খেলোয়াড় অবসর না নিয়ে থাকে আর যদি নির্বাচকরা মনে করে তাকে দরকার, তখন ওই নির্বাচক প্যানেল নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলবে।’