ভোট হবে গণপরিষদে, ৯০, ৭১-এর মত ২৪শে শহীদের মর্যাদা দিতে হবে

আগামী সংসদ নির্বাচন এবং সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, শহীদ পরিবার এবং আহত যোদ্ধারা ঘোষণা দিয়েছেন নতুন সংবিধান তৈরি করতে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে গণপরিষদ নির্বাচন। তারা আরও হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, তাড়াহুড়ো করে নির্বাচনের জন্য দুই হাজার

মানুষ জীবন দেয়নি। শুধু নির্বাচনের জন্য প্রায় ২৫ হাজার মানুষ গুলিতে পঙ্গু হয়নি। মানুষ স্বৈরাচারের গুলির সামনে দাঁড়িয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ পাওয়ার জন্য জীবন দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ৭২ এর সংবিধানে অধিকারের কথা নেই। তারা সেই সংবিধান চান না। ৭২ এর সংবিধান বাতিল করতে হবে। নতুন করে সংবিধান লিখতে হবে। পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলায়

হেফাজত হত্যাকান্ড ,সবশেষ চব্বিশের জুলাইয়ে গণহহত্যার বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। আওয়ামী লীগের বিচারের আগে দেশে কোনো ভোট হবে না। এই মুহূর্তে দরকার ছাত্রজনতার বিচার আর সংস্কার বলেও জানানো হয়।

১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে সরকারকে ডেটলাইন জানিয়ে দেন তারা। ১৫ দিনের মধ্যে ঘোষণা না হলে তারা আবারও অগ্রিম সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে রাখেন। কর্মসূচীতে বক্তারা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত

প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই নতুন সংবিধান হবে। আগামী নির্বাচন হবে গণপরিষদ নির্বাচন। সে নির্বাচনে নির্বাচিতরাই সংবিধান সংশোধন করবে। ঘোষণাপত্রে আমাদের দাবি না থাকলে সেটি মেনে নেয়া হবে না। ৯০, ৭১ এ যারা শহিদ হয়েছেন রক্ত দিয়েছেন তাদের মতো করে ২৪শে যারা আন্দোলনে অংশ নিয়ে শহিদ হয়েছেন রক্ত দিয়েছেন তাদের চেতনা আগামীতে লেখা থাকতে হবে।

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীরা এসব দাবী তুলে ধরেন। শহিদ মিনার

এলাকায় সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে শহিদ মিনারে জড়ো হন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এ সময় ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘গোলামি না আজাদি, আজাদি-আজাদি’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে শোনা যায়।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পাঠ করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ নতুন সংবিধান চায়, নতুন সংবিধান প্রত্যাশা করে। আগামী জাতীয় সংসদ

নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই নতুন সংবিধান হবে। আগামী নির্বাচন হবে গণপরিষদ নির্বাচন। সে নির্বাচনে নির্বাচিতরাই সংবিধান সংশোধন করবে। বাংলাদেশের মানুষের অসংখ্য চাওয়া আছে, আগামীর নির্বাচনে যারা জয়ী হবেন তাদের সেই চাওয়াগুলো পূরণ করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সংস্কার চায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ

যখন জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পাঠের আয়োজনের ঘোষণা দেয় তখন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক সংগঠনের সমন্বয়ে ঘোষণাপত্র পাঠের ঘোষণা দেওয়া হয়। এই ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয়। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কাছে বলতে চাই, অবিলম্বে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পাঠ করতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ৫ মাস হয়ে গেলো এখনো দেশের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক হয়নি। আমাদের বিপ্লবীদের উপর যদি আর হামলা হয় তাহলে তার দায় সরকারের । পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্তরে হত্যাকাণ্ড, ১৬ বছর আওয়ামী লীগের গুম খুন সব কিছুর বিচার করতে হবে। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে

। আজকে যারা উপস্থিত হয়েছেন আপনারা ১৫ দিন প্রচারণা চালাবেন, মানুষের জনমত গ্রহণ করবেন। ততদিন পর্যন্ত আওয়ামী ও ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে আপনাদের লড়াই সংগ্রাম জারি থাকবে। আপনাদের সামনে আগামী ১৫ জানুয়ারিতে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে পুনরায় সমাবেশ হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে দরকার ছাত্রজনতার বিচার আর সংস্কার।

আওয়ামী লীগের বিচারের আগে কোনো ভোট হবে না বলেও জানান তিনি। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের সরকার গঠনের কয়েক মাস পেরিয়ে গেছে কিন্তু এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি, দ্রব্যমূল্যের দাম স্বাভাবিক হয়নি। আপনারা বলেন, সিন্ডিকেট এক হাত থেকে অন্য হাতে গিয়েছে। সিন্ডিকেটের হাত পাল্টালে আপনাদের কাজ কী? এসব সিন্ডিকেটের হাত গুঁড়িয়ে দিতে হবে।

নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের দাবির মুখে গতকাল প্রেস রিলিজ দিয়েছে সরকার। তারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্র তৈরি করা হবে। আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই, ঘোষণাপত্রে

আমাদের দাবি না থাকলে সেটি মেনে নেয়া হবে না। ৯০, ৭১ যারা শহিদ হয়েছেন রক্ত দিয়েছেন তাদের মতো করে ২৪শে যারা আন্দোলনে অংশ নিয়ে শহিদ হয়েছেন রক্ত দিয়েছেন তাদের চেতনা আগামীতে লেখা থাকতে হবে। আমরা নতুন এক বাংলাদেশ

দেখতে চাই। যে বাংলাদেশে পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রের চোখ রাঙানো চলবে না। একই সঙ্গে তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, খুনি হাসিনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না। আগে সংস্কার হবে তারপর ভোট হবে। সংস্কারের আগে নির্বাচন হবে না।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, আমাদের লড়াই এখনো শেষ হয়নি। খুনি হাসিনার বিচার পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে। কেউ ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করতে চায় তাদের মাটিতে ফেলে দেওয়া হবে । জুলাই বিপ্লবের

যোদ্ধাদের উপর কিভাবে হামলা হয় প্রশ্ন তুলেন তিনি। নিরাপত্তা দিতে না পারলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে চেয়ার ছেড়ে দেওয়ার হুংকার দেন সারজিস। আহতরা এখনো সুচিকিৎসা পাচ্ছে না। যারা বিপ্লবের বিজয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাসী। কিন্তু বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির সুযোগে কেউ যদি

আমাদের ওপর মাথা তুলে দাঁড়াতে চায়, সেই মাথা আমরা মাটিতে নামিয়ে আনবো। আমাদের বিপ্লবীরা কেউই ঘরে ফিরে যায়নি। আমাদের যে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে, সেগুলো আমরা ফিরিয়ে আনতে চাই। আমরা আহত যোদ্ধাদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন করতে চাই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, ঢাকায় আজকের মার্চ ফর ইউনিটিতে আসার সময় সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের ওপর হামলা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো এখনও হামলাকারীরা গ্রেপ্তার হয়নি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কী করে? সিসি টিভি ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও কেন হত্যাকারীদের ধরা হচ্ছে না।

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে টালবাহানা কেন? শাপলা চত্বরের বিচার কেন আজও হচ্ছে না? সবকিছুতেই আমরা সরকারের তরফ থেকে টালবাহানা দেখতে পাচ্ছি। হাসিনার পতনের ৫ মাসেও কেন দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না? এই ব্যর্থতার দায় কার? আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ইউনূস সরকার যেন সাবধান হয়ে যান। জুলাইয়ে নিহত শহীদের লাশ কেন

কবর থেকে তোলাহচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তিনি। মাহিন বলেন, ৭২ এর সংবিধান অধিকারের কথা নাই। সেই সংবিধান আমরা চাই না। তা বাতিল করতে হবে। আওয়ামী লীগকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে হবে।

সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমার ভাইকে যারা হত্যা করেছে তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে দ্বিতীয় বিপ্লব ঘোষণা করা হবে। আমারা দেখতে পাচ্ছি মুজিববাদ সংবিধান এখনো বহাল রয়েছে। যে সংবিধান আমাদের অধিকার দিতে পারে না। সেই সংবিধান থাকতে পারে না। এই সংবিধান বাতিল করতে হবে। যার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের কবর রচিত হবে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাত হারানো আরজে আতিকুল গাজী বলেছেন, আমরা নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করিনি। নির্বাচনের জন্য রাজপথে রক্ত দেইনি। কেউ যদি যদি সংস্কার ছাড়াই ক্ষমতা চায় তাহলে ১৬০০ শহিদ ভাইয়ের জীবন ফিরিয়ে দিতে হবে। আমার ২২ হাজার আহত ভাইয়ের আগের সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দিতে, আমার হাত ফিরিয়ে দিতে হবে। তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে আগে সংস্কার শেষ তারপর নির্বাচন হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য উমামা ফাতেমা বলেছেন, এতোদিন সরকার কোথায় ছিলো? যখন আমরা আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাইয়ের ঘোষণাপত্রের জন্য দিনক্ষণ ঠিক করলাম তখন সরকারের পক্ষ থেকে হঠাৎ রাতে ঘোষণা দেয়া হলো তারাই ঘোষণাপত্র দেবেন। আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই, ঘোষণাপত্র নিয়ে কোনো কালক্ষেপণ করা যাবে না। আগামী ১৫

দিনের মধ্যে তা ঘোষণা করতে হবে। একই সঙ্গে আজকে এই শহীদ মিনারে জানিয়ে দিতে চাই যতদিন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বিচার না হবে, সংস্কার শেষ না হবে ততদিন দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। দুই হাজার মানুষ শুধু নির্বাচনের জন্য জীবন দেয়নি।

সমাবেশে অংশ নিয়ে মুগ্ধর বাবা বলেছেন, সরকার ক্ষমতা নেওয়ার তিন মাস পরে শোনা যায় ওবায়দুল কাদের দেশ থেকে ভারতে পালিয়ে গেছে। যারা তাকে ধরেনি এবং গাফিলতি করেছে তাদের অবিলম্বে বিচার চেয়েছেন তিনি।

মিরপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান বলেছেন, আমাদের সন্তানদের হত্যার ৫ মাস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু খুনিরা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা বিচারের নামে প্রহসন চাই না। যত দ্রুত সম্ভব বিচার করুন।

আমাদের রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে বাধ্য করবেন না। শহীদ পরিবার ও আহতদের পরিবারদের রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য করবেন না। আপনারা আমাদের সরকার, আমাদের সন্তানদের হত্যার বিচার করুন।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, যেসকল দালাল লুকিয়ে আছে তাদের মুক্ত করুন। যেদেশের বিপ্লবীদের নিরাপত্তা নাই, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আহতদের সুচিকিৎসা ও শহীদ পরিবারের সম্মান নিশ্চিত করতে হবে। অতিদ্রুত আমাদের প্রোক্লেমেশন দিতে হবে।

নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের মানুষ নতুন সংবিধান চায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন জুলাই প্রোক্লেমেশনের জন্য রাজপথে তখন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। অবিলম্বে জুলাই প্রোক্লেমেশন জানুয়ারির ১৫ তারিখের মধ্যে ঘোষণা করতে হবে।

সমন্বয়ক রিফাত রশীদ বলেন, এখনো খুনি হাসিনার বিচার হয় নাই। খুনি হাসিনাকে এনে অবিলম্বে বিচার করতে হবে। অলিতে গলিতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঘাপটি মেরে বসে আছে। তাদের বিচার করতে হবে। দাবি আদায় না

হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বো না। সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, অন্তর্র্বতী সরকারের কাছে প্রশ্ন করতে চাই সিসিটিভি ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও যেসব পুলিশ ছাত্র-জনতার উপর গুলি করেছে কেনো তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। ভিডিও ফুটেজ থাকার পরও

কেন লাশ কবর থেকে তোলা হবে। এই বিপ্লব শুধু ছাত্রদের বিপ্লব নয়। শ্রমিকরা বুক পেতে দিয়েছিলেন বন্দুকের সামনে তবুও তাদের বৈষম্য দূর হয় নাই। আজকে দ্রব্যমূল্য কমে নাই। আমাদের ভাইদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কী করেন? বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে কেন এত টালবাহানা। বিচারিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। বিভিন্ন দল সুশীলতা করে। কিন্তু চাঁদাবাজি করে কারা?

খালেদ এবার হাসনাতকে বললেন, মাস্তানি দেখাবেন?

লাইভ টকশো অনুষ্ঠানে এবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহকে কড়াভাবে আক্রমণ করে ফের তোপের মুখে পড়লেন আলোচিত উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন। সম্প্রতি একটি টকশো ভাইরাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

টকশোতে হাসনাতকে আক্রমণ করে খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, আপনি কি মাস্তানি দেখাবেন? খালেদের এমন আক্রমণের সমুচিত জবাবও দিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই আহ্বায়ক।

পাঁচই আগস্ট বৈষম্য বিরোধীদের ছাত্র আন্দোলনের কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। বৈষম্য বিরোধী দল আগামীতে কি তারা রাজনৈতিক দল করে নির্বাচনে আসবে সে বিষয়ে হাসনাত কথা বলেন টকশোতে।

খালেদ একপর্যায়ে বলেন, সুশীলতার বিপরীতটা কী? আপনি সুশীলতা দেখাইতে পারবেন না কী দেখাইতে পারবেন, মাস্তানি? সমুচিত জবাব দিয়ে হাসনাত বলেন, আমরা সুশীলতাও না, মাস্তানিও দেখাবো না। ৫ই আগস্টের পূর্বে যেটা বাংলাদেশের

প্রশ্নেযেটা হওয়া উচিত সেটাই আমরা দেখাবো। এবার খালেদ বলেন, আপনার মনে হওয়া আর আমার মনে হওয়া আলাদা হলে কোনটা স্ট্যান্ড করবে? হাসনাত তখন বলেন, মনে হওয়া দিয়ে তো হবে না। একটা বিষয় আছে, ন্যয্যতার দিক দিয়ে।

খালেদ বলেন, কে এটা ন্যয্য ঘোষণা করবে? হাসনাত আব্দুল্লাহ নাকি ধরেন অন্য যে কেউ? খালেদের এই পেঁচালপাড়া প্রশ্নের উত্তরে হাসনাত বলেন, তাহলে একটা ভোট হোক। সময় টেলিভিশনে আমার যাওয়াটা ঠিক ছিল নাকি না?- সে ইস্যুতে ভোট হোক। দেখেন মানুষ কী বলে।

সময়টিভিতে যাওয়া আপনার ঠিক ছিল কিনা খালেদের এমন প্রশ্নের জবাবে হাসনাত বলেন, আমি মনে করি আমার যাওয়াটা ঠিকই ছিল। আমি গিয়েছি আমাদের উদ্বেগটা জানানোর জন্য। কিন্তু চাকরিচ্যুতির প্রক্রিয়াটা ভুল ছিল।

আমি কাউকে চাকরি থেকে বাদ দিতে বলি নাই। সেখানে যাওয়া ঠিক ছিল কিনা তানিয়ে চ্যালেঞ্জ করেন তিনি।খালেদ বলেন, আমি হাসিনার মত এরকম কাউরে চাই না যে, সে একইসাথে নেতা, কাজী, প্রধান, ডাক্তার।

এরকম সব দায়িত্ব যে নিজে নিজে নিয়ে নিবে। আর এই ছোট ছোট হাসিনা চাই না। হাসনাত বলেন, আমরাও চাই না সবকিছু সেন্ট্রালাইজড (এককেন্দ্রিক) হয়ে যাক। আমরা চাই প্রতিষ্ঠানগুলো ফাংশন করুক। হাসনাতকে যেন সময় টেলিভিশনে না

যাইতে হয় আমরা ওইটা চাই। কোন একটা ঝামেলা হইলে সেখানে হাসনাতকে কেন যাইতে হবে। কারণ ওইখানে যে প্রতিষ্ঠানটা ফাংশন করতেছে না। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলাকে এমনভাবে কইরা দিয়া গেছে যেখানে কোন প্রতিষ্ঠানই ফাংশন করতেছে না।

খালেদ মহিউদ্দিন যেন দেশে বইসা ক্ষমতাকে প্রশ্ন করতে পারে। এবার খালেদ বলেন, পলিটিক্যাল পার্টিগুলি যেমন করে চান্দা নেয় একটা রশিদ দেয় বা দেয় না। আপনারাও যখন কোনো ব্যয় করেন সেগুলির জন্য কিভাবে টাকা নেন?

এই প্রশ্নের জবাবে সুন্দর করে ব্যাখ্যা দিয়ে খালেদকে বুঝিয়ে দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রোগ্রাম ও ব্যয়গুলো কিভাবে করা হয়।

বছরের প্রথমেই রাজনীতি নিয়ে যে বার্তা দিলেন সেনাবাহিনীর প্রধান

সেনাপ্রধান হিসেবে নিজের মেয়াদকালে আমি রাজনীতিতে নাক গলাব না। আমি সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে হস্তক্ষেপ করতে দেব না। এটাই আমার স্পষ্ট অঙ্গীকার বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

সম্প্রতি সেনা সদরদপ্তরে দেশের একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করছি। তারা আমাদের কাছ থেকে যে ধরনের সহায়তা চাইছে, সেভাবেই সহায়তা দিচ্ছি এবং দেব। যে দিন অন্তর্বর্তী সরকার বলবে- আপনাদের অনেক ধন্যবাদ,

আপনারা আপনাদের কাজটা সম্পন্ন করেছেন, এখন পুলিশ আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব নেবে। আমরা তখন সানন্দে সেনানিবাসে ফিরে যাব। রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি,

রাজনীতিবিকদের বিকল্প রাজনীতিবিদেরাই। তাদের বিকল্প সেনাবাহিনী নয়। যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যাক্ত করে সেনাপ্রধান বলেন, আমরা পুরোপুরি সরকারের পাশে রয়েছি।

আমরা চেষ্টা করব প্রধান উপদেষ্টা যেভাবেই আমার বা আমাদের সাহায্য চাইবেন, আমরা সেভাবেই উনাকে সহযোগিতা করব। এটাতে যদি আমাদের অসুবিধা হয়, সৈনিকদের যদি সাময়িক অসুবিধাও হয়, তারপরও সরকারকে সহযোগিতা করে যাব।

দেশ ও জাতির স্বার্থেই আমরা এটা করব। এই জাতির জন্য, দেশের জন্য ও দেশের মানুষের স্বার্থে যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা তৈরি আছি। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরির গুরুত্বের বিষয়ে তিনি বলেন,

আমি আশাবাদী। রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে ভালো রাজনীতিবিদ রয়েছেন। হয়তো ভিন্নমতের মানুষও আছেন। আমার অতীত অভিজ্ঞতায় বলে, যখন এমন একটা ক্রান্তিকাল আসে, আমাদের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে

বসলে তারা সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসেন। অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে সমঝোতার ব্যাপারে আশাবাদী জেনারেল ওয়াকার উজ জামান বলেন, এখনও সমঝোতা সম্ভব।

একসঙ্গে বসে এটা করা সম্ভব। এটা একটা সংস্কৃতির ব্যাপারও বটে। সবার এটা বোঝা উচিত। আমি নৈরাশ্যবাদী নই।

১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে: হাসনাত

আগামী ১৫ জানুযারির মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘ফার্চ ফর ইউনিটি’ সমাবেশে একথা বলেন তিনি। সমাবেশে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র জারি হওয়ার আগপর্যন্ত আপনারা পাড়া-মহল্লায় মানুষের কাছে যাবেন।

তারা কী বলতে চায় সেসব কথা নিয়ে আসবেন। তিনি বলেন, আমরা ৩ আগস্ট এই শহীদ মিনার থেকে এক-দফা ঘোষণা দিয়েছিলাম। এই অভ্যুত্থান অনেকেই মেনে নিতে পারেনি। এ জন্যই পুলিশ,

সচিবালয়ে অনেকেই আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আপনাদের বলি আপনারা রিয়েলিটি মেনে নেন। খুনি হাসিনার এই দেশে পুনর্বাসন হবে না। আমরা তাকে সীমান্তের ওপারে পাঠিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা যারা অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছি, সারাদেশের মানুষ আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছে। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ হয়নি। সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে।

কোনো বিপ্লবীর গায়ে যদি হাত পড়ে, সরকারকে এর দায় নিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে পারিনি। গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ যে নির্যাতন, নিপীড়ন, গুম, খুন করেছে;

সেগুলোর বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তি ঐক্যবদ্ধ হতে থাকবো। বক্তব্য শেষে হাসনাত ‘এই মুহূর্তে দরকার, বিচার আর সংস্কার’ স্লোগান দিতে থাকেন।

বক্তব্যের শেষে তিনি বলেন, আপনাদের সাথে আবারও দেখা হবে ১৫ জানুয়ারিতে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র নিয়ে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর ইউনিটি’র গাড়িবহরে হামলা!

বাগেরহাটের মোল্লাহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মার্চ ফর ইউনিটি’র গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে খুলনা মহানগর থেকে রওনা হওয়া শিক্ষার্থীদের গাড়িবহরে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, কর্মসূচিতে যোগ দিতে খুলনা থেকে ২৫টি বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। বাগেরহাটের মোল্লাহাট মাদরাসাঘাট এলাকায় পৌঁছালে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা গাড়ি লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে

এবং গাড়ি থামিয়ে কয়েকজনকে মারধর করে। পরে শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে মূহুর্তেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা এলাকা। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত বিশ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী কাজ করছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে মোল্লাহাট অতিক্রম করার সময় আগে থেকে প্রস্তুত হয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। স্থানীয়রা তাদের সহযোগিতা করে বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

থানার সামনে ঘটনা হওয়া স্বত্তেও এ সময় পুলিশ নিরব ভূমিকায় ছিলো বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। ওই এলাকাটি আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এলাকা বলেও জানান তারা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন খুলনার সমন্বয়ক জহুরুল তানভীর জানান,

খুলনা থেকে শান্তিপূর্ণ ভাবে তাদের বহর ঢাকায় যাচ্ছিলো। পথে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের দোসররা এই আক্রমণ করেছে বলে জানান তিনি।

আরেক সমন্বয়ক মিনহাজুল আবেদীন সম্পদ বলেন, পরিকল্পিতভাবে এই হামলা করা হয়েছে। আমাদের ভাইদের রক্ত ঝরেছে।

এর বিচার অতি দ্রুত করতে হবে, জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আর না হলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের মাধ্যমে জড়িতদের খুঁজে বের করবে বলে হুশিয়ারী দেন তিনি।- যমুনা টেলিভিশন।

যে কারনে ভারতীয় হাইকমিশনে গেলেন ‘ড.মুহাম্মদ ইউনূস’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে গিয়ে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এই তথ্য জানিয়েছে। প্রেস উইং জানায়, মুহাম্মদ ইউনূস আজ ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। তিনি ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে গিয়ে দেশটির প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

ভারতীয় হাইকমিশনে খোলা শোকবইয়ে শোকবার্তাও লিখেছেন।

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে জ্ঞানী উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘তিনি কত সাদামাটা ছিলেন। কত জ্ঞানী ছিলেন।মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ভারতকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক জায়ান্টে পরিণত করতে মনমোহন সিং একটি বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন।

উল্লেখ্য,গেল বৃহস্পতিবার রাতে ভারতের নয়াদিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এইমস) হাসপাতালে মারা যান ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।

উত্তাল শহীদ মিনার, স্লোগানে-স্লোগানে ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে মার্চ ফর ইউনিটি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মিছিল-স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। শিক্ষার্থী ও জনতা সেখানে শেখ হাসিনাসহ জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছেন।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে শহীদ মিনার এলাকায় এ চিত্র দেখা গেছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

এ সময় ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘গোলামি না আজাদি, আজাদি-আজাদি’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে শোনা যায়।

বক্তারা বলেন, শহীদদের রক্তের দাগ এখনও শুকায়নি, এর মধ্যে স্বৈরাচারকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন কেউ কেউ। যখনই আমরা চিরতরে দেশ থেকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে চাই, তখনই সুশীল বেশে কিছু ব্যক্তি ও দল বিরোধিতায় নেমে যায়। আমরা প্রয়োজনে তাদেরও প্রতিহত করব।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নেতাকর্মীরা শহীদ মিনারের আশপাশে অবস্থান নিচ্ছেন। চেয়ার বিছিয়ে শহীদ মিনারের সামনেও অনেক বিপ্লবীদের অবস্থান করতে দেখা যায়। অনেকের মাথায় দেশের পতাকা বাধা রয়েছে।

চট্টগ্রাম, নাটোর, পঞ্চগড়, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ছাত্র-জনতাও সকাল থেকে শহীদ মিনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান নেন এবং পর্যায়ক্রমে তারা মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে জড়ো হন।

প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আজ শহীদ মিনারে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করার কথা ছিল। পরে অন্তর্বর্তী সরকার এ ঘোষণাপত্র পাঠ করবে জানালে আজ ঘোষণাপত্র পাঠ হবে কি না তা নিয়ে বিভ্রান্তি শুরু হয়।

গতকাল সোমবার রাত পৌনে ২টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটরে নিজেদের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সেখানে বলা হয়, মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ (ঐক্যের জন্য যাত্রা) কর্মসূচি পালন করা হবে।

মসজিদের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো ‘আওয়ামী লীগ আবার ফিরবে, ‘জয় বাংলা’

খুলনা ও কমলাপুর রেলস্টেশনের পর এবার ফেনী বড় জামে মসজিদের এলইডি স্ক্রিনে ভেসে উঠলো ‘আওয়ামী লীগ ফিরবে, জয় বাংলা’। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুর ২টার পর হঠাৎ ফেনী বড় জামে মসজিদের সামনে লাগানো

এলইডি স্ক্রিনে লেখাটি দেখে হতবাক হন মুসল্লি ও পথচারীরা। বিকেল ৩টার পর এলইডি স্ক্রিনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ফেনী মডেল থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মসজিদের অপারেটর জমির উদ্দিনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

এবার মসজিদের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো ‘আওয়ামী লীগ ফিরবে, জয় বাংলা’ বড় জামে মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি আবুল হোসেন জানান, মসজিদটি সংস্কারের পর থেকে এলইডি স্ক্রিনে নামাজের সময়সূচি ভেসে থাকে।

আজ জোহরের নামাজের পর মুসল্লিরা বের হয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পরই মসজিদের দেওয়ালের সঙ্গে লাগানো বড় স্ক্রিনে ‘আওয়ামী লীগ ফিরবে; জয় বাংলা’ লেখাটি ভেসে ওঠে। বিষয়টি জানার পর মসজিদের সামনে অনেকে ভিড় করেন।

মাহমুদুল হাসান নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘মসজিদের কমিটি এখন পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়নি। আগের স্বৈরাচার কমিটির অনেকেই পলাতক। আবার কেউ কেউ গণহত্যা মামলার আসামি। আগের কমিটির কিছু সদস্য

খোলস পাল্টিয়ে মুসল্লিদের সঙ্গে একাকার হয়ে রয়েছেন। তাদেরই কেউ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে গন্ডগোল লাগাতে এ ধরনের কাজটি করেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’

এ বিষয়ে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা বলেন, এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাদের জন্য মসজিদের অপারেটর জমির হোসেনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই তদন্ত করা হবে।

এবার মসজিদের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো ‘আওয়ামী লীগ ফিরবে, জয় বাংলা’ এর আগে, গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে মূল ফটকের সামনে ডিজিটাল ব্যানারে ‘ছাত্রলীগ ভয়ংকর রূপে ফিরবে’ বলে একটি লেখা ভেসে ওঠে।

এর আগে ২৪ অক্টোবর ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের বহির্গমন পথের ডিসপ্লেতে ‘আওয়ামী লীগ জিন্দাবাদ’ লেখা প্রদর্শন হয়। পরে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবগত হওয়ার পর তা প্রদর্শন বন্ধ করে দেয়।

৩ দাবির ঘোষণা হাসনাত আব্দুল্লাহর

আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রাজনীতিকে চূড়ান্তভাবে কবর দেওয়াসহ তিনটি দাবির কথা জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) রাতে হাসনাত আব্দুল্লাহ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে

এ দাবি জানান। তার দাবিগুলো হলো আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রাজনীতিকে চূড়ান্তভাবে কবর দিতে হবে। আওয়ামী রাজনীতির প্রত্যাবর্তন অসম্ভব করে দিতে হবে।

ভারতীয় আধিপত্যবাদের অবসান ঘটাতে হবে। স্বাধীন, সার্বভৌম, আত্মনির্ভর মর্যাদার নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।
এ ছাড়া বাংলাদেশে একটা সাম্য ও ইনসাফের সমাজ গড়তে হবে।

এর আগে আজ দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরের সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আগামী ৩১ ডিসেম্বর নাৎসি বাহিনীর সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা ও মুজিববাদী ৭২-এর সংবিধানকে কবর দেওয়া হবে।

‘মুজিব কোট’ পুড়িয়ে পদত্যাগ করলেন আওয়ামী লীগ নেতা

প্রকাশ্যে ‘মুজিব কোট’ পুড়িয়ে দল থেকে পদত্যাগ করলেন আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম। তিনি জানান, আর কোনো দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকবে না।

রেজাউল করিম জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও মামুদপুর ইউপি সদস্য।

আজ রবিবার দুপুরে উপজেলার চৌমুহনী বাজারে সড়কে প্রকাশ্যে মুজিব কোট পুড়িয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি।

মুজিব কোট পোড়ানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে রেজাউল করিম বলেন, ‘এই দলকে আমার আর ভালো লাগে না।

এদের চালচলন, কর্মকাণ্ড আর ভালো লাগে না। তাই মুজিব কোট পুড়িয়ে আমি এই দল থেকে পদত্যাগ করলাম।