কিডনিতে পাথর একটি সাধারণ কিন্তু যন্ত্রণাদায়ক স্বাস্থ্যসমস্যা। প্রস্রাবে থাকা খনিজ পদার্থ যেমন ক্যালসিয়াম, অক্সালেট বা ইউরিক অ্যাসিড জমে গিয়ে পাথর তৈরি করে। এতে মূত্রে থাকা পানি এই উপাদানগুলো যথেষ্ট পরিমাণে গলাতে না পারায় সেগুলো জমাট বাঁধে। ফলে কিডনিতে বা মূত্রনালিতে তীব্র ব্যথা সৃষ্টি হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ১১ জনের মধ্যে ১ জনের কিডনিতে পাথর হতে পারে। পুরুষদের ঝুঁকি নারীদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। তবে কিছু সচেতনতা অবলম্বন করলে এই সমস্যার ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দৈনন্দিন জীবনের কিছু সাধারণ অভ্যাস কিডনিতে পাথর গঠনের ঝুঁকি বাড়ায়। নিচে এমন সাতটি অভ্যাস তুলে ধরা হলো—
১. সকালে খালি পেটে চা বা কফি পান
খালি পেটে চা বা কফি পান করা শরীরের ক্ষতি করতে পারে। এসব পানীয়তে থাকা অক্সালেট যৌগ ক্যালসিয়ামের সঙ্গে মিশে কিডনিতে স্ফটিক তৈরি করে, যা পরবর্তীতে পাথরে রূপ নেয়। তাই সকালে খালি পেটে নয়, কিছু খাওয়ার পর চা বা কফি পান করাই উত্তম।
২. অতিরিক্ত প্রাণিজ প্রোটিন গ্রহণ
গরু, খাসি, মুরগি বা মাছের মতো প্রাণিজ প্রোটিন বেশি খেলে প্রস্রাব অ্যাসিডিক হয়ে যায় এবং সাইট্রেটের মাত্রা কমে যায়, যা কিডনি পাথর প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ। সপ্তাহে কয়েকদিন উদ্ভিজ্জ প্রোটিনভিত্তিক খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
৩. নিয়মিত নাস্তা না করা
নাস্তা বাদ দিলে শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যায়, যা কিডনিতে পাথর গঠনে ভূমিকা রাখে। সকালে হালকা হলেও নিয়মিত কিছু খাওয়া জরুরি—যেমন ফল, ভেজানো বাদাম বা দই।
৪. পর্যাপ্ত পানি না পান করা
কম পানি খেলে প্রস্রাব ঘন হয়, ফলে ক্যালসিয়াম ও অক্সালেট জমে পাথর তৈরি করে। বিশেষজ্ঞরা প্রতি ঘণ্টায় অল্প অল্প করে পানি পান করতে এবং লেবুর রস মিশিয়ে পান করার পরামর্শ দেন, কারণ এতে থাকা সাইট্রেট পাথর গঠন রোধ করে।
৫. অতিরিক্ত পালং শাক, বিট ও বাদাম খাওয়া
এসব খাবারে অক্সালেট বেশি থাকে, যা কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে। তবে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার (যেমন দই বা পনির) সঙ্গে খেলে এই ঝুঁকি কমে যায়।
৬. দীর্ঘ সময় প্রস্রাব চেপে রাখা
নিয়মিত প্রস্রাব চেপে রাখলে কিডনি বা মূত্রথলিতে খনিজ পদার্থ জমে পাথর তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি ইউরিনারি ইনফেকশনের ঝুঁকিও বাড়ে।
৭. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ
খাবার থেকে পাওয়া ক্যালসিয়াম উপকারী হলেও অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট কিডনি পাথরের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট না নেওয়াই ভালো।
চিকিৎসকদের মতে, প্রতিদিনের ছোট ছোট সচেতন অভ্যাসই কিডনি পাথরের মতো বড় সমস্যার ঝুঁকি কমাতে পারে। নিয়মিত পানি পান, সুষম খাদ্যাভ্যাস ও সঠিক জীবনযাপনই এই রোগ প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি।
