বাংলাদেশের জন্য আসছে এক বড় দুঃসংবাদ, বিশেষ করে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনকে ঘিরে। সংস্থাটি তাদের নয়টি শান্তিরক্ষা মিশন থেকে ২৫ শতাংশ সেনা ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে পারে বাংলাদেশ।
৮ অক্টোবর একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার বরাতে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৩ থেকে ১৪ হাজার সেনা ও পুলিশ সদস্য নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। একই সঙ্গে অনেক বেসামরিক কর্মীর চাকরিও হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশে প্রভাব
১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় এবং বাংলাদেশ ১৯৮৮ সালে এই মিশনে যোগ দেয়। প্রথম দফায় ইরান–ইরাক সামরিক পর্যবেক্ষক মিশনে ১৫ জন সদস্য প্রেরণ করেছিল বাংলাদেশ।
এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে ১০টি দেশে মোট ৫,৮১৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী, যার মধ্যে ৪৪৪ জন নারী, দায়িত্ব পালন করছেন।
এই দীর্ঘ যাত্রায় ৩৫ বছরে ১৬৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী প্রাণ দিয়েছেন এবং অন্তত ২৫৭ জন আহত হয়েছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সেনা প্রেরণে বাংলাদেশ বর্তমানে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
তবে এবার জাতিসংঘের মিশনে বড় ধরনের সেনা ছাঁটাই হলে বাংলাদেশও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে শুধু অংশগ্রহণ কমবে না, বরং বিদেশি মুদ্রা আয়ের উৎসেও বড় ধাক্কা লাগবে।
আর্থিক সংকটে জাতিসংঘ
বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা মিশন সংকোচনের মূল কারণ জাতিসংঘের তীব্র আর্থিক সংকট। সংস্থার সবচেয়ে বড় অর্থদাতা যুক্তরাষ্ট্র, যারা মোট বাজেটের প্রায় ২৬ শতাংশ দেয়। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চীন দেয় প্রায় ২৪ শতাংশ অর্থ।
কিন্তু বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘে ২.৮ বিলিয়ন ডলার বকেয়া রেখেছে। এর মধ্যে নতুন অর্থবছর শুরুর আগে ১.৫ বিলিয়ন ডলার বকেয়া ছিল, যার সঙ্গে এখন আরও ১.৩ বিলিয়ন ডলার যোগ হয়েছে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা শিগগিরই ৬৮০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করবে, কিন্তু দেশটির জাতিসংঘ মিশন এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের প্রভাব
অর্থ সংকট আরও গভীর হয় গত আগস্টে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালের জন্য বরাদ্দ ৮০০ মিলিয়ন ডলারের শান্তিরক্ষা তহবিল বাতিল করেন।
এরপর মালি, লেবানন ও কঙ্গো মিশনের ব্যর্থতা উল্লেখ করে হোয়াইট হাউসের বাজেট অফিস ২০২৬ সাল থেকে শান্তিরক্ষা তহবিল সম্পূর্ণ বাতিলের প্রস্তাব দেয়।
জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বলেছেন, “সংস্থাটি তার ৮০তম বার্ষিকীতে গুরুতর অর্থসংকটে পড়েছে। ব্যয় কমানো ও কার্যকারিতা বাড়ানোর নতুন পথ খোঁজা ছাড়া আমাদের বিকল্প নেই।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতিসংঘের এই নতুন ছাঁটাই পরিকল্পনা কার্যকর হলে শুধু শান্তিরক্ষা মিশনের পরিধিই সংকুচিত হবে না, বরং বাংলাদেশের মতো সেনা-রপ্তানিকারক দেশগুলোও বড় অর্থনৈতিক চাপে পড়বে।
