অর্থ যোগানের সংকট থাকা সত্ত্বেও আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নতুন জাতীয় বেতন কাঠামো গঠন করতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বর্তমানে স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বেতন কাঠামো বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত হিসাব-নিকাশ চলছে।
তবে বাড়তি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে চাকরির বাইরে থাকা বিপুল জনগোষ্ঠীর আর্থিক সংগতির সাথে মূল্যস্ফীতির চাপ সামঞ্জস্য করার বিষয়টি। গত কয়েক বছরের অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও মূল্যস্ফীতির প্রভাব সামলাতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য
নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নতুন কাঠামো ঘোষণার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য বেতন কমিশন বিদ্যমান পে-স্কেল বিশ্লেষণ করে নতুন বৃদ্ধির হার নির্ধারণ করছে, যেখানে গুরুত্ব পাচ্ছে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন পদের বেতনের অনুপাত।
প্রাথমিক আলোচনায় রয়েছে চিকিৎসা, শিক্ষা ও যাতায়াত ভাতা বৃদ্ধিসহ কয়েকটি স্তরের ভাতা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ও। কমিশনের এক সদস্য জানান, যারা বেতন ছাড়াও সরকারি সুবিধা ভোগ করেন, তাদের বেতন অতটা বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। তবে নিম্নগ্রেডের কর্মচারীদের প্রকৃত জীবনযাত্রার খরচ চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে—চাল-ডাল, সন্তানের পড়াশোনা ও চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে তাদের বেতন যথেষ্ট নয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন বেতন কাঠামোতে স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈষম্য আরও বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে। এতে চাপ বাড়তে পারে তৈরি পোশাকসহ ৪৫টি শিল্প খাতের শ্রমিকদের ওপর, পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খেতে হবে চাকরির বাইরে থাকা বিপুল জনগোষ্ঠীকেও।
বেতন কমিশন জানিয়েছে, সব অংশীজনের মতামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ধরন ভিন্ন হওয়ায় স্বল্প সময়ে সম্পূর্ণ যাচাই-বাছাই করা কঠিন। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এই মুহূর্তে নতুন কমিশন গঠনের পরিবর্তে একটি স্থায়ী পে কমিশন গঠনই যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত হতে পারত।
তাদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকার এখন যদি নতুন কমিশন দেয়, তাহলে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে নতুন করে প্রত্যাশা তৈরি হবে আরও একটি বৃদ্ধি ঘোষণার জন্য, যা অর্থনীতির ওপর দ্বিগুণ চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বর্তমান অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রেক্ষাপটে দুই দফা ব্যয়বহুল বেতন সমন্বয় অর্থনীতির পক্ষে সম্ভব নয়, বলছেন তারা।
বর্তমানে জাতীয় বেতন কাঠামোর আওতায় প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন-ভাতা পান। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বিদ্যুৎ কোম্পানি, সশস্ত্র বাহিনী এবং বিচারকদের জন্য রয়েছে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আলাদা বেতন কাঠামো।
