ফ্যাটি লিভার কমবে মাত্র ৯ দিনে! গবেষণায় চমক

ফ্যাটি লিভার কমবে মাত্র ৯ দিনে! গবেষণায় চমক

ফ্যাটি লিভার কমানো কি সত্যিই কঠিন? নতুন গবেষণা বলছে একেবারেই না। আপনি যদি মাত্র নয় দিন অতিরিক্ত ফ্রুকটোজযুক্ত খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলতে পারেন, তবে লিভার নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত কোষ পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু করে দেয়। হ্যাঁ, এত দ্রুত!
সুইট ড্রিংক, ক্যান্ডি, প্যাকেটজাত জুস বা বেকারি—যত লুকানো চিনি, সবই লিভারের জন্য অঘোষিত হুমকি। অজান্তেই এই অতিরিক্ত চিনি লিভারের কোষে চর্বি জমিয়ে তৈরি করে ফ্যাটি লিভারের জটিলতা।

চিনি কীভাবে চুপিসারে লিভার নষ্ট করে

ফ্রুকটোজ যখন শরীরে ঢোকে, লিভার তা খুব সহজেই চর্বিতে রূপান্তরিত করে। ফলে লিভারে ফ্যাট সঞ্চিত হয়, শুরু হয় প্রদাহ, আর ধীরে ধীরে কোষের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা কমে আসে।
এটাই Non-Alcoholic Fatty Liver Disease (NAFLD)—বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে সাধারণ লিভারের রোগ। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় ৩০ শতাংশ এবং স্থূল বা ডায়াবেটিস রোগীদের ৯০ শতাংশের বেশি এতে আক্রান্ত।
ফ্রুকটোজ বেশি হলে ইনসুলিন প্রতিরোধ বাড়ে, রক্তে শর্করা অস্বাভাবিক হয় এবং হৃদরোগ–মেটাবলিক রোগের ঝুঁকিও বাড়তে থাকে।

গবেষণায় চমক: মাত্র ৯ দিনে লিভারের চর্বি কমে ২০%

টুরো ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, সান ফ্রান্সিসকোর গবেষকরা মোটা লাতিনো ও আফ্রিকান-আমেরিকান কিশোর–তরুণদের ওপর গবেষণা চালান।
তাদের স্বাভাবিক খাদ্য থেকে ফ্রুকটোজ বাদ দিয়ে তার বদলে রাখা হয় গ্লুকোজ, তবে মোট ক্যালোরি একই রাখা হয়।

ফলাফল—
মাত্র ৯ দিনেই MRI স্ক্যানে দেখা যায়:

লিভারে জমা চর্বি কমেছে ২০ শতাংশের বেশি

ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে

ওজন কমেছে ১ শতাংশেরও কম—অর্থাৎ পরিবর্তন এসেছে শুধুই ফ্রুকটোজ কমানোর কারণে

এতে প্রমাণিত হয়, NAFLD প্রাথমিক পর্যায়ে স্থায়ী নয় এবং খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।

কেন এই ফ্রুকটোজ এত ক্ষতিকর?

হাই-ফ্রুকটোজ কর্ন সিরাপ (HFCS)—যা আমরা সোডা, বেকারি, সস, ড্রেসিং, প্যাকেটজাত খাবারে পাই—আধুনিক খাদ্যাভ্যাসে ফ্রুকটোজের মাত্রা ভয়াবহভাবে বাড়িয়েছে।
প্রাকৃতিক ফলে যে ফ্রুকটোজ থাকে, তা ততটা ক্ষতিকর নয়; কারণ ফলে থাকে ফাইবার, যা চিনি শোষণ কমায়। কিন্তু প্রক্রিয়াজাত খাবারের ফ্রুকটোজ লিভারের ওপর সরাসরি আঘাত হানে।

চিনি কমানোর কার্যকর টিপস

• সোডা, এনার্জি ড্রিংক, প্যাকেটজাত জুস বাদ দিয়ে পানি, হার্বাল টি বা ফল–ইনফিউজড পানি পান করুন।
• খাবারের লেবেল দেখে HFCS বা ‘added sugar’ আছে কি না যাচাই করুন।
• প্রক্রিয়াজাত খাবারের বদলে সম্পূর্ণ ও তন্তুযুক্ত খাবার বেছে নিন।
• বাড়িতে রান্না করলে চিনি নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
• ১০০% ফলের রসও সীমিত পরিমাণে পান করুন—কারণ এটিতেও ফ্রুকটোজ বেশি থাকে।
• ডায়াবেটিস, স্থূলতা বা লিভার সমস্যা থাকলে নিয়মিত পরীক্ষা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

গবেষকরা বলছেন মাত্র কয়েক দিনের সচেতনতা লিভারের ওপর অবিশ্বাস্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ফ্রুকটোজ কমালে লিভারই নিজে থেকে আগের ক্ষতি সারাতে শুরু করে।
অল্প পরিবর্তনেই বড় ফল সুস্থ লিভার, কম ঝুঁকি, আর শক্তিশালী সামগ্রিক স্বাস্থ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *