লিভার ক্যান্সারকে প্রায়শই ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়। কারণ এটি ধীরে ধীরে, অগোচরে বিকাশ লাভ করে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত তেমন কোনো প্রকাশ্য উপসর্গ দেখা দেয় না। অনেকের ধারণা, খাবারের প্রতি আগ্রহ কমা লিভার ক্যান্সারের প্রাথমিক সংকেত, তবে গবেষণায় দেখা গেছে, এই রোগ প্রায়শই শরীরে সূক্ষ্ম, সহজেই উপেক্ষিত পরিবর্তনের মাধ্যমে শুরু হয়।
সবচেয়ে সাধারণ লিভার ক্যান্সারের ধরন হলো হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা, যা প্রাথমিক অবস্থায় প্রায় কোনো লক্ষণ প্রকাশ করে না। দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস B বা C, মদ্যপান, ফ্যাটি লিভার জনিত সিরোসিস, স্থূলতা এবং কিছু বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শ এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ সনাক্ত করা গেলে চিকিৎসার ফলাফল উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করা সম্ভব। সময়মতো নির্ণয় এবং শল্যচিকিৎসা, লিভার ট্রান্সপ্লান্ট বা টার্গেটেড থেরাপির মাধ্যমে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।
১. পেটের অস্বস্তি
প্রাথমিক হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমায় আক্রান্ত রোগীরা প্রায়শই পেটের উপরের ডান অংশে অস্বস্তি অনুভব করেন, যা লিভারের ঠিক নিচে থাকে। অনেক সময় এটি অন্যান্য সাধারণ সমস্যার সঙ্গে মিলিয়ে উপেক্ষা করা হয়।
২. মৃদু জ্বর
Cancer Research UK-এর তথ্য অনুযায়ী, সংক্রমণ না থাকলেও প্রাথমিক লিভার ক্যান্সারে মাঝে মাঝে হালকা জ্বর দেখা দিতে পারে। অন্তর্বর্তী জ্বর থাকলে সতর্ক থাকা উচিত। প্রাথমিক রক্ত পরীক্ষা, লিভার ফাংশন মূল্যায়ন এবং ইমেজিং স্টাডি লিভারের অস্বাভাবিকতা শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
৩. মূত্র বা মলের রঙ পরিবর্তন
Journal of Clinical Gastroenterology-তে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, মল রঙের পরিবর্তন এবং গা dark ় মূত্র প্রাথমিক হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমার লক্ষণ হতে পারে। Mayo Clinic জানিয়েছে, সাদা বা চকোলাটির মতো মল লিভারের পিত্ত নিঃসরণের অক্ষমতার কারণে হতে পারে।
৪. দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি
লিভার শরীরের বিপাক, ডিটক্সিফিকেশন এবং শক্তি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যখন লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা টিউমার বৃদ্ধি পায়, তখন শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়াগুলো ব্যাহত হয়। হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ক্লান্তি সবচেয়ে সাধারণ প্রাথমিক উপসর্গের একটি। বিশ্রামের পরও কমে না এমন ক্লান্তি থাকলে সতর্ক হওয়া জরুরি।
৫. হালকা ওজন কমা বা খাবারে আগ্রহ কমা
যদিও এটি অনেক সময় সাধারণ কারণে হতে পারে, তবে প্রাথমিক লিভার ক্যান্সারের সঙ্গে এটি প্রায়শই সম্পর্কিত। হঠাৎ করে খাবারের প্রতি আগ্রহ হারানো বা ওজন কমা কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই ঘটলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ঝুঁকি ও সতর্কতা
লিভার ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সহজে উপেক্ষিত হয় কারণ এগুলো সূক্ষ্ম, অস্পষ্ট এবং ধীরে ধীরে বিকশিত হয়। ক্লান্তি, হালকা পেটের অস্বস্তি, মূত্র বা মলের রঙ পরিবর্তন ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের মূল্যায়ন প্রয়োজন। প্রয়োজন হলে রক্ত পরীক্ষা, ইমেজিং টেস্ট বা লিভার বায়োপসি করা হয়।
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে এই সূক্ষ্ম লক্ষণের সচেতনতা এবং সময়মতো চিকিৎসা মূল্যায়নই লিভার ক্যান্সারের প্রাথমিক সনাক্তকরণ ও সফল চিকিৎসার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
