নতুন পে স্কেল বাস্তবায়ন হলে চাপে পড়বেন যারা

নতুন পে স্কেল বাস্তবায়ন হলে চাপে পড়বেন যারা

নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়নে হলে ১৫ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর বেতন এক লাফে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকসহ নতুন স্কেলের আওতায় পড়বে প্রায় ২২ লাখ পরিবার। দেশের বেসরকারি চাকরিজীবীদের চার কোটি পরিবার নতুন বেতন কাঠামো বাইরে থাকবে। বেতন বেড়ে গেলে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়বে, এতে ওই পরিবারগুলো চাপে পড়বে।

নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়নে আসবে বাড়তি অর্থের চাপ। নতুন কাঠামোতে শুধু যে সরকারের ব্যয় বাড়াবে তা নয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ব্যয় করার মতো আয়ও আগের তুলনায় বাড়বে। এতে সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে। সম্প্রতি জাতীয় পে-কমিশনকে এমন মত দিয়েছে অর্থ বিভাগ।

এদিকে সরকারের এক সিদ্ধান্তে প্রায় ১৫ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর বেতন এক লাফে দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকসহ নতুন স্কেলের আওতায় পড়বে প্রায় ২২ লাখ পরিবার। এসব পরিবারে এখন আনন্দের বন্যা বইলেও বিষাদের বিউগল বাজতে শুরু করেছে দেশের চার কোটি পরিবারে।

কারণ লাগামহীন দ্রব্যমূল্য আরও একবার ঊর্ধ্বলম্ফ দেবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নতুন পে-স্কেল কার্যকর হলে ২২ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীই চলে আসবেন আয়করের আওতায়। বাতিল হচ্ছে তাদের বেতনবহির্ভূত ভাতা ও সম্মানী। বাড়বে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে বাসা ভাড়াবাবদ কেটে নেওয়া সরকারি আয়। সর্বোপরি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ভোগাবে পুরো জাতিকে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রায় ছয় কোটি মানুষ কর্মসংস্থানে যুক্ত আছেন। এদের মধ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন।

নতুন পে-স্কেলের ফলে সৃষ্ট চাপের বিষয়টি স্বীকার করেছেন জাতীয় পে-কমিশনের সভাপতি সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খান। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, আমাদের হাতে সীমিত সম্পদ আছে। এর মধ্য থেকেই সর্বোচ্চ বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব থাকবে।

অর্থ বিভাগের বরাতে তিনি জানান, নতুন পে-স্কেল চালু হলে সরকারের ওপর কিছু বাড়তি অর্থনৈতিক চাপ তৈরি হবে। তবে এ কাঠামো অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয়ও আগের তুলনায় বৃদ্ধি পাবে, যা তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াবে এবং সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বর্তমান বেতন কাঠামোতে সর্বনিম্ন বেতন স্কেল ৮ হাজার ২৫০ টাকা জানিয়ে তারা বলেন, নতুন কাঠামো অনুযায়ী এটি ১৬ হাজার টাকার বেশি হতে পারে, যার ফলে সর্বনিম্ন বেতন প্রাপ্ত কর্মকর্তারাও আয়কর সংক্রান্ত নিয়মের আওতায় আসবেন। এর আগে, এ কর্মকর্তারা আয়করমুক্ত ছিলেন। সর্বনিম্ন বেতন সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের আয়কর পাবে সরকার। যা নতুন বেতন কাঠামোর বাড়তি অর্থ সংস্থানে জোগান দেবে।

তাছাড়া চাকরিজীবীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সরকারি আবাসনে থাকছেন। বেতন কাঠামো সমন্বয়ের ফলে সরকারি বাসাবাড়ির ভাড়ার হার বাড়বে। ফলে ওই উৎস থেকেও সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে।

জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন জাতীয় বেতন কাঠামো প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ৯০ থেকে ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন। ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকেই কার্যকর হতে পারে নতুন বেতন কাঠামো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *