হঠাৎ চলতি মাসের ১২ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় অনুষ্ঠিত এক ‘ঝাড়ু মিছিল’ রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কয়েক শতাধিক নারীর অংশগ্রহণে আয়োজিত এই মিছিলে ব্যানারে ছিল গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকির নাম, যেখানে তাকে ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ আখ্যা দিয়ে উপজেলায় ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়।
বিএনপি ও গণসংহতি আন্দোলনের মধ্যে নির্বাচনী জোট থাকায় ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবে আলোড়ন তোলে। স্থানীয়ভাবে অভিযোগ ওঠে, এই মিছিলে বিএনপির একাংশের ইন্ধন ছিল, যার উদ্দেশ্য সাকির প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করা।
গণসংহতি আন্দোলনের উপজেলা সমন্বয়ক শামীম শিবলী অভিযোগ করে বলেন, “এটা নির্বাচনী প্রোপাগান্ডা। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভয় দেখানোর চেষ্টা চলছে যাতে সাকি সাহেব বাঞ্ছারামপুরে না লড়েন।”
অন্যদিকে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদ দাবি করেন, “বিএনপির দায়িত্বশীল কোনো নেতা-কর্মী এই মিছিলে অংশ নেননি। বরং সাকি বিএনপির ভোটব্যাংকের ওপর ভর করে এমপি হতে চান।”
তবে এই ঘটনার পেছনে যে জোটভিত্তিক আসন ভাগাভাগির টানাপোড়েন কাজ করছে, সেটি এখন অনেকটাই স্পষ্ট। কারণ, শুধু বাঞ্ছারামপুর নয়—দেশের বিভিন্ন জেলায় বিএনপি ও শরীক দলের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চিত্র দেখা যাচ্ছে।
বিএনপির ভেতরে ‘নেতৃত্বের জট’ ও একাধিক প্রার্থী
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি এলাকায় বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যানারে ছাওয়া। বাঞ্ছারামপুর উপজেলায়ই অন্তত দশজন নেতা এমপি হতে আগ্রহী, যাদের ঘিরে ভেতরে ভেতরে দলীয় বলয়ও গড়ে উঠেছে।
হারুনুর রশীদ বলেন, “পনের বছর ধরে রাজনৈতিক নেতৃত্বে একটা জট তৈরি হয়েছে। তাই প্রার্থী অনেক, এটা অস্বাভাবিক নয়। সবাই ভাবে যদি বিএনপির টিকিট পাওয়া যায়, তাহলে এমপি হওয়া সহজ।”
তবে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে প্রার্থী মনোনয়ন পেলে স্থানীয় বিএনপি নেতারা সাকির পক্ষে কাজ করবেন কি না, তা অনিশ্চিত। কেউ কেউ ইঙ্গিত দিয়েছেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ দাঁড়িয়ে যেতে পারেন, যা জোটের ঐক্য নষ্ট করতে পারে।
প্রার্থী তালিকা ও আসন ভাগাভাগিতে জটিলতা
বিএনপি জানিয়েছিল, অক্টোবরের মধ্যেই ২০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে, কিন্তু বাস্তবে কাজটি এখনও শেষ হয়নি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, “২০০ আসনে গ্রীন সিগন্যাল দিতে পারবো, বাকি ১০০ আসনে কাজ চলছে।”
এই ১০০ আসনের অনেকগুলোতেই জোটের শরীকদের দাবি আছে। শুধু গণতন্ত্র মঞ্চই চেয়েছে প্রায় ৫০টি আসন, যদিও বিএনপি সর্বোচ্চ ৫০টি আসন ছাড়ার কথাই ভাবছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা সাইফুল হক বলেন, “আমরা ১৩৮টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছি। বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় সেখান থেকে ৫০-৬০টি আসনের একটি শর্টলিস্ট চূড়ান্ত করা হতে পারে।”
বিদ্রোহী প্রার্থীর আশঙ্কা
বিএনপি আশাবাদী হলেও জোটের প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর তৃণমূল পর্যায়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
সাইফুল হক বলেন,
“আমরা অতীতে দেখেছি, আওয়ামী লীগ শরীকদের আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে পারেনি। তবে বিএনপি যেন সেই ভুল না করে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আলোচনা ও বোঝাপড়ার মাধ্যমেই বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকানো সম্ভব হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”
সারসংক্ষেপ
বাঞ্ছারামপুরের ‘ঝাড়ু মিছিল’ ঘটনাটি শুধু জুনায়েদ সাকি বা স্থানীয় রাজনীতি নয়—বরং আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি ও শরীক জোটের ভেতরে বিদ্যমান অঘোষিত প্রতিযোগিতা ও বিভেদের প্রতিফলন।
প্রার্থী চূড়ান্তকরণ, আসন ভাগাভাগি এবং তৃণমূলের ঐক্য বজায় রাখা—এই তিনটি বিষয়ই এখন বিএনপির নির্বাচনী কৌশলের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
