আজকের জীবনে ব্যথা যেন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। অফিসের চাপ, অনিয়মিত জীবনযাপন, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার কিংবা ঘুমের অভাব—সবকিছুই শরীরে ব্যথার কারণ হতে পারে। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, কিছু বিশেষ ধরনের ব্যথা হতে পারে শরীরের ভয়াবহ বিপদের পূর্বাভাস, এমনকি ক্যানসারেরও।
সব ব্যথাই ক্যানসারের লক্ষণ নয়, তবে কোনো অকারণ বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা হালকাভাবে নেওয়া মারাত্মক ভুল হতে পারে। কারণ, ক্যানসার যত দ্রুত শনাক্ত হয়, চিকিৎসা ততটাই সফল হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরের যে কোনও অংশে হঠাৎ করে ব্যথা শুরু হলে এবং তা কয়েক সপ্তাহেও না কমলে, কিংবা বিশ্রাম ও ঘুমের সময়েও বজায় থাকে, তখন সেটি ক্যানসারের প্রাথমিক ইঙ্গিত হতে পারে। নিচে এমন পাঁচটি স্থানের ব্যথার কথা বলা হলো, যেগুলো কখনও অবহেলা করা উচিত নয়—
১. পিঠে ব্যথা
সাধারণত ভুল ভঙ্গি বা পেশির টান থেকে পিঠে ব্যথা হয়। কিন্তু যদি হঠাৎ নিচের বা মাঝের পিঠে ব্যথা শুরু হয়, যা বিশ্রামেও না কমে এবং রাতে আরও বেড়ে যায়, তাহলে এটি কিডনি, ফুসফুস বা মেরুদণ্ডজনিত ক্যানসারের সতর্ক সংকেত হতে পারে।
২. পেটে ব্যথা
গ্যাস, বদহজম বা অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসে পেটে ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যদি পেটের নিচের দিকে ক্রমাগত ব্যথা থাকে, সঙ্গে ফোলাভাব, হজমে সমস্যা বা খিদে না লাগার মতো উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে এটি অন্ত্র, ডিম্বাশয় বা পাকস্থলীর ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
৩. হাড় বা জয়েন্টে ব্যথা
আর্থ্রাইটিস বা আঘাতের কারণে হাড়ে ব্যথা হতে পারে। তবে যদি ব্যথা ধীরে ধীরে বাড়ে, রাতে বেশি হয় এবং সাধারণ ওষুধেও উপশম না হয়, তাহলে তা হাড়ের ক্যানসার বা শরীরের অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়া টিউমারের ইঙ্গিত হতে পারে।
৪. বুকে ব্যথা
সবসময় হৃদরোগ নয়—ফুসফুস বা স্তন ক্যানসারের কারণেও বুকে টান, ব্যথা বা চাপ অনুভূত হতে পারে। যদি ব্যথা দীর্ঘদিন স্থায়ী হয় এবং কাশি বা শ্বাসকষ্টের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৫. গলা বা মুখে ব্যথা
গলার ভেতরে বা মুখে ক্ষত, ফোলা বা ব্যথা যদি দুই সপ্তাহেরও বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে এটি মুখগহ্বর বা গলার ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে ধূমপান বা তামাক ব্যবহারকারীদের এই বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকা উচিত।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন—যদি শরীরের কোনো জায়গায় ব্যথা তিন সপ্তাহেরও বেশি স্থায়ী হয়, বিশ্রাম বা ব্যথার ওষুধেও না কমে, ওজন হঠাৎ কমে যায়, জ্বর বা অতিরিক্ত ক্লান্তি দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শরীরের অকারণ ব্যথাকে কখনও অবহেলা করবেন না—এটাই হতে পারে আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা।
