প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার, যাকে প্রায়শই ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়, দ্রুত অগ্রসর হয় এবং প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা কঠিন। সাধারণ উপসর্গ যেমন পেটের ব্যথা, জন্ডিস বা অপ্রত্যাশিত ওজন হ্রাস অনেকেরই জানা। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু পায়ের উপসর্গ প্রথমেই প্রকাশ পেতে পারে। পায়ে ব্যথা, ফোলা, লালচে ভাব বা তাপমাত্রা বৃদ্ধি এই রোগের প্রাথমিক সংকেত হতে পারে। এসব সূক্ষ্ম ইঙ্গিত সময়মতো শনাক্ত করা হলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়, যা বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়াতে সাহায্য করে। বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের কারণে এক মিলিয়নের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেন, তাই প্রচলিত ও পায়ের প্রাথমিক উপসর্গ উভয়ই জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১. পায়ে ব্যথা
পায়ে দীর্ঘস্থায়ী বা অপ্রত্যাশিত ব্যথা একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্ক সংকেত। এটি প্রায়শই ডীপ ভেইন থ্রোম্বোসিস (DVT)-এর কারণে হতে পারে, যেখানে পায়ের গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধে। অ্যামেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে, প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারে এই ধরণের থ্রোম্বোসিস ক্যান্সারের কোষের উপস্থিতির কারণে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ার পরিবর্তনের ফল।
২. পায়ে ফোলা
এক বা দুই পায়ের হঠাৎ ফোলা রক্ত জমাট বাঁধা বা রক্ত সঞ্চালন সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের রোগীদের ক্ষেত্রে, ফোলাভাব DVT বা টিউমারের কারণে রক্তনালীর চাপ বৃদ্ধির ফলেও হতে পারে।
৩. পায়ে লালচে ভাব
পায়ের ত্বকে লালচে রঙ বা লালচে ছায়া প্রদাহ বা সংক্রমণের ইঙ্গিত হতে পারে। DVT-এর কারণে আক্রান্ত এলাকায় রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, ফলে লালচে ভাব দেখা দেয়। প্রায়শই এর সঙ্গে তাপ, কোমলতা এবং হালকা ফোলাভাব থাকে। এটি অবহেলা করলে ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধা বা অন্যান্য জীবন-হুমকিসংক্রান্ত জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।
৪. পায়ে তাপ অনুভূত হওয়া
ফোলা বা ব্যথাযুক্ত অংশে তাপ অনুভূত হলে এটি প্রদাহের লক্ষণ। শরীর রক্ত জমাট বা টিউমারের প্রতিক্রিয়ায় এই তাপ প্রকাশ করতে পারে। প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের ক্ষেত্রে, পায়ের তাপ এবং লালচে ভাব প্রাথমিক উপসর্গের মধ্যে অন্যতম, যা জন্ডিস বা পেটের ব্যথার আগে প্রকাশ পেতে পারে।
কেন এই উপসর্গগুলো গুরুত্বপূর্ণ
এই পায়ের উপসর্গগুলি, বিশেষত যখন কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই দেখা দেয়, উপেক্ষা করা উচিত নয়। এগুলো প্রাথমিকভাবে প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের ইঙ্গিত হতে পারে এবং সময়মতো চিকিৎসা ও মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। প্রাথমিক ধাপে শনাক্ত করা না হলে রোগটি প্রায়শই উন্নত পর্যায়ে ধরা পড়ে, যা চিকিৎসা জটিল এবং পূর্বাভাস কম অনুকূল করে।
প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের অন্যান্য প্রাথমিক লক্ষণ
পায়ের উপসর্গ গুরুত্বপূর্ণ হলেও, অন্যান্য প্রাথমিক লক্ষণগুলোর প্রতি নজর দেওয়াও জরুরি:
পেট বা পিঠে ব্যথা: উপরের পেট বা পিঠে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা প্যানক্রিয়াসের সমস্যার ইঙ্গিত।
জন্ডিস: ত্বক বা চোখে হলুদভাব, প্রায়শই গা dark ় প্রস্রাবের সঙ্গে, পিত্তনালীর বাধার নির্দেশ।
অপ্রত্যাশিত ওজন হ্রাস ও ক্ষুধাহ্রাস: ক্যান্সারের কারণে দেহের বিপাক পরিবর্তিত হলে হঠাৎ ওজন কমতে পারে।
বমি ও বমিভাব: টিউমার হজম ব্যবস্থায় প্রভাব ফেললে বমি ভাব দেখা দিতে পারে।
প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের প্রাথমিক সতর্ক সংকেত চিহ্নিত করা ও সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা জীবন রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। পায়ের উপসর্গ, পেটের ব্যথা বা জন্ডিসের মতো লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া অত্যাবশ্যক।
