গ্রেফতার সেনা কর্মকর্তাদের কি করা হবে ,যা বললেন চিফ প্রসিকিউটর

গ্রেফতার সেনা কর্মকর্তাদের কি করা হবে ,যা বললেন চিফ প্রসিকিউটর

গুম-খুন ও জুলাই–আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের হওয়া তিনটি পৃথক মামলায় গ্রেফতার দেখানো ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ নির্দেশ দেন। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

একই সঙ্গে এই তিন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের হাজিরের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী ২০ নভেম্বর।

পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, “আসামিদের কোন কারাগারে রাখা হবে, তা কারা কর্তৃপক্ষই নির্ধারণ করবে।” আদালতের প্রক্রিয়ায় সহায়তা করায় সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো কর্মকর্তারা হলেন—
র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন ও কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে);
র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম এবং বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম।
এছাড়া ডিজিএফআইয়ের সাবেক তিন পরিচালক—মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকীকেও কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে ১১ অক্টোবর সেনা সদরের এক ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চার্জশিটে নাম আসা সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৫ জনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পরদিনই (১২ অক্টোবর) সরকার ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা করে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ধারা ৫৪১(১) এবং The Prisons Act, 1894-এর ধারা ৩(বি) অনুসারে ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোড সংলগ্ন ‘এমইএস বিল্ডিং নং-৫৪’কে সাময়িক কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে। তবে প্রজ্ঞাপনে ভবনটি কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি।

গুম ও খুনের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে গত ৮ অক্টোবর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এদের মধ্যে ডিজিএফআইয়ের পাঁচ সাবেক প্রধানসহ ২৫ জন সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন।
২১ অক্টোবরের মধ্যে তাদের গ্রেফতার করে ২২ অক্টোবর আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। দেশের ইতিহাসে চাকরিরত অবস্থায় এত সংখ্যক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একসঙ্গে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ঘটনা এটিই প্রথম, যা নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *