নতুন আমির নির্বাচনের জন্য ভো গ্রহণ শুরু করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে এই ভোট গ্রহণ। এবারের নির্বাচনে জামায়াতের তিন সদস্যের প্যানেলে রয়েছেন দলটির বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবর রহমান ও বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহনগরের রোকনদের (সদস্য) ভোটের মাধ্যমে শুরু হয়েছে এই ভোট গ্রহণ। শনিবার রাজধানীর একটি অডিটরিয়ামে ভোট দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের রুকনগণ। এবারের নির্বাচনে সারাদেশে এক লাখ ২৫ হাজারের বেশি রুকনগণ ভোট দিয়ে নতুন আমির নির্বাচন করবেন।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জনকণ্ঠকে বলেন, মজলিসে শূরার সদস্যদের ভোটে তিনজনের প্যানেল হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে আমির নির্বাচনের ভোট গ্রহণ ও গণনা শেষে হবে। চিঠির মাধ্যমে প্যানেল সম্পর্কে রুকনদের জানানো হয়েছে। কেউ চাইলে প্যানেলের বাইরেও যোগ্য মনে করলে যে কোনো রুকনকে আমির হিসেবে ভোট দিতে পারবেন।
যেভাবে ভোট দিচ্ছেন রুকনরা ॥ দল প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ডাকযোগে চিঠির মাধ্যমে রুকনদের নামে চিঠি পাঠানো হতো। স্বৈারাচার হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে সাংগঠনিকভাবে অনেকটা চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। সময়ের পরিবর্তনে জুডিসিয়াল, মেডিক্যাল কিলিং ও জেল হত্যার শিকার হন জামায়াতের প্রবীণ নেতারা। নেতৃত্বশূন্য করতেই এই হত্যাকা- চালায় হাসিনা সরকার।
সে সময় থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই রুকনদের চিঠি পাঠানো শুরু হয়। চিঠিতে মজলিসে শূরা সদস্যদের দ্বারা মনোনীত প্যানেলের সদস্যদের নাম জানানো হয়। ভোটের সময় নির্ধারিত ব্যালটে নিজের নাম ব্যতীত প্যানেল থেকে একজন অথবা যে কোনো রুকনের নামে ভোট দেওয়া হয়। ভোট শেষে নির্ধারিত বক্সে ব্যালটটি জমা রাখা হয়।
জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রের ১৫নং ধারায় আমিরে জামায়াত নির্বাচনের নিয়ম এবং ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, আমিরে জামায়াতের নির্বাচনের জন্য বিদায়ী কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্যগণ তিনজনের একটি প্যানেল নির্বাচন করবেন। তবে আমির নির্বাচনে প্যানেল বহির্ভূত যে কোনো সদস্যকে (রুকনকে) ভোট দেওয়ার অধিকার ভোটারগণের থাকবে। নির্বাচিত হওয়ার পর আমিরে জামায়াত কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার নির্বাচিত সদস্য/কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্যগণের কর্মপরিষদ/কেন্দ্রীয় উপস্থিতিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিকট শপথ গ্রহণ করবেন।
দলটির বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান প্রথমবার জামায়াতের নির্বাচিত হন ২০১৯ সালে এবং পুনর্নির্বাচিত হন ২০২২ সালে। ১৮ নভেম্বর ২০২৩-২০২৫ কার্যকালের জন্য শপথ নেন। তার মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বিদায়ী কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা তিন সদস্যের একটি প্যানেল তৈরি করে দেয়, যেখান থেকে রুকনগণ ভোট দিয়ে আমির হিসেবে একজনকে বেছে নেন। প্যানেলের বাইরেও রুকনরা চাইলে যেকোনো রুকনকে ভোট দিয়ে আমির নির্বাচন করতে পারেন।
প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে ২০১৯ সালে প্রথমবার আমির নির্বাচিত হন ডা. শফিকুর রহমান। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই রাজনৈতিকভাবে ফ্যাসিবাদ শক্তির মোকাবিলা করে গেছেন বিভিন্নভাবে। স্বৈরাচার হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে কারা নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে একাধিকবার। শুধু নিজের ওপরে নয়, পরিবারের অনেকের ওপরে নির্যাতন চালায় হাসিনা সরকার।
জঙ্গি নাটক সাজিয়ে শফিকুর রহমানের ছেলে রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহকে ২০২২ সালের নভেম্বরে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। রাজনৈতিক এবং পারিবারিক চাপের মাঝেও দলকে পরিচালনার মাধ্যমে নেতৃত্বের উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলেন তিনি।
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে পেছন থেকে আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন তিনি। যার কারণে ১ আগস্ট আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে নিষিদ্ধ হয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে। পাঁচ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনার পতনের দিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যায় ডা. শফিকুর রহমানকে।
পাঁচ আগস্টের পর থেকে একের পর এক রাজনৈতিক কর্মকা-ের মাধ্যমে আলোচনায় রয়েছেন ডা. শফিকুর রহমান। গণঅভ্যুত্থানের পর পর আকস্মিক বন্যায় ত্রাণ নিয়ে ছুটে যাওয়া, ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যের লক্ষ্য নিয়ে সিরিজ বৈঠক, বিভাগীয় সমাবেশ, ঢাকায় মহাসমাবেশে বার বার অসুস্থ হয়েও বক্তব্য শেষ করা এবং সর্বশেষ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক দলের মধ্যে ডা. শফিকুর রহমানের গ্রহণযোগ্যতা আরও বেড়েছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। ভোট দেওয়া একাধিক রুকনদের ভোটের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমান আমিরে জামায়াতকেই বেছে নিতে চান তারা।
এবার ডা. শফিকুর রহমান পুনরায় নির্বাচিত হলে তৃতীয়বারের মতো দেশের বৃহত্তম ইসলামি দলের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। এর আগে জামায়াতে ইসলামীতে টানা তৃতীয়বার আমিরের পদে দায়িত্ব পালন করেছেন অধ্যাপক গোলাম আযম এবং মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী।
