বুকব্যথা নয়, হার্ট অ্যাটাকের আসল প্রথম লক্ষণ অন্য কিছু! জানালেন বিশেষজ্ঞ

বুকব্যথা নয়, হার্ট অ্যাটাকের আসল প্রথম লক্ষণ অন্য কিছু! জানালেন বিশেষজ্ঞ

হার্ট অ্যাটাক মানেই বুকব্যথা এ ধারণা এখনো অনেকের মনে গেঁথে আছে। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, হৃদরোগের প্রথম সংকেত অনেক সময় বুকের ব্যথা নয়, বরং এমন কিছু সূক্ষ্ম উপসর্গ যা আমরা সাধারণত অবহেলা করি। সিনিয়র কার্ডিয়োলজিস্ট ড. সঞ্জয় ভোজরাজ জানিয়েছেন, দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি বা বিশ্রাম নেওয়ার পরও না কাটানো অবসাদই হতে পারে আসন্ন হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক ইঙ্গিত।

প্রথম সংকেত আসে ক্লান্তির মাধ্যমে

ড. ভোজরাজের ব্যাখ্যায়, যখন হৃদযন্ত্র সঠিকভাবে রক্ত পাম্প করতে ব্যর্থ হয়, তখন শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। এর ফলেই দেখা দেয় অস্বাভাবিক ক্লান্তি ও অবসাদ। অনেকেই এই ক্লান্তিকে বয়স, মানসিক চাপ বা ঘুমের ঘাটতির ফল হিসেবে ধরে নেন। কিন্তু পর্যাপ্ত বিশ্রাম বা জীবনযাপনের পরিবর্তনের পরও যদি এই ক্লান্তি না যায়, তবে তা দুর্বল বা অতিরিক্ত চাপগ্রস্ত হৃদয়ের ইঙ্গিত হতে পারে।

তিনি বলেন, রক্তসঞ্চালনের ঘাটতি ও শরীরের প্রদাহ বাড়লে শক্তি দ্রুত ফুরিয়ে যায়, মানুষ অস্বাভাবিকভাবে নিস্তেজ অনুভব করে। সময়মতো এই পরিবর্তন বোঝা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জীবন রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

‘নীরব হার্ট অ্যাটাক’ বুঝতে না পারার ঝুঁকি

সব হার্ট অ্যাটাকেই যে তীব্র বুকব্যথা হয়, তা নয়। অনেক সময় হার্ট অ্যাটাক ঘটে খুব হালকা বা প্রায় অদৃশ্য উপসর্গ নিয়ে, যাকে বলা হয় ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’। এতে বুকব্যথা তেমন না থাকলেও হৃদপেশিতে রক্ত ও অক্সিজেনের প্রবাহ কমে গিয়ে ক্ষতি হয় ঠিক আগের মতোই।

অনেকেই বুঝতেই পারেন না যে তাদের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, কারণ উপসর্গগুলো থাকে অস্পষ্ট—যেমন চোয়ালে ব্যথা, অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা হালকা অস্বস্তি। পরবর্তী সময়ে পরীক্ষায় জানা যায় হৃদযন্ত্রে ক্ষতির চিহ্ন।

যেসব উপসর্গ অবহেলা করবেন না

চিকিৎসকদের মতে, প্রাথমিক বা নীরব হার্ট সমস্যার উপসর্গ অনেক সময় সাধারণ অসুস্থতার মতো মনে হয়। কিন্তু এগুলো দীর্ঘস্থায়ী হলে সতর্ক হওয়া জরুরি। যেমন—
নিয়মিত ক্লান্তি বা ফ্লুর মতো অবসাদ,
বুক, বাহু বা উপরের পিঠে হালকা ব্যথা,
চোয়াল বা কাঁধে অস্বস্তি,
হজমে সমস্যা বা পেটে অস্বাভাবিক ভার,
অল্প পরিশ্রমেই শ্বাসকষ্ট।

এই উপসর্গগুলো হার্ট অ্যাটাকের কয়েক দিন বা এমনকি কয়েক সপ্তাহ আগেও দেখা দিতে পারে।

আগেভাগে শনাক্ত করাই মূল প্রতিরোধ

হৃদরোগের সূক্ষ্ম সংকেতগুলো দ্রুত শনাক্ত করা বড় ধরনের কার্ডিয়াক জটিলতা এড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, রক্তপরীক্ষা ও ইসিজি করলে হৃদযন্ত্রের অতিরিক্ত চাপের লক্ষণ দ্রুত ধরা পড়ে, যা জীবনযাপন পরিবর্তন বা ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

ড. ভোজরাজ বলেন, “আপনার শক্তি ও ক্লান্তির মাত্রাই বলে দেয় হৃদযন্ত্র কেমন কাজ করছে। শরীরের এই সতর্কবার্তা শোনার সময় এখনই, ক্লান্তি আপনাকে গ্রাস করার আগেই।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *