
২০১৯ সালের জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছিল—যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে ২০৫০ সালের মধ্যে ওষুধ-প্রতিরোধী রোগে প্রতিবছর প্রায় এক কোটি মানুষের মৃত্যু হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মূল কারণ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) বা জীবাণুর ওষুধ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি।
এই বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে হেমরাজ জৈন হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. গগন এন জৈন বলেন, “অ্যান্টিবায়োটিক আধুনিক চিকিৎসার একটি প্রধান ভিত্তি, যা অসংখ্য মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে। কিন্তু ভুল ব্যবহার, অতিরিক্ত ব্যবহার এবং ভ্রান্ত ধারণা এটির কার্যকারিতা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলছে।”
ডা. জৈনের মতে, জীবাণু যখন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাব এড়িয়ে বেঁচে থাকার ক্ষমতা অর্জন করে, তখনই জন্ম নেয় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স। এতে সংক্রমণ চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ে, মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে এবং রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
তিনি অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে ৫টি প্রচলিত ভুল ধারণা তুলে ধরেন—
ভুল ধারণা ১: সুস্থ বোধ করলে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া বন্ধ করা যায়
ডা. জৈন বলেন, “কয়েকদিনের ওষুধ খাওয়ার পর ভালো লাগলেও সংক্রমণ পুরোপুরি দূর নাও হতে পারে। মাঝপথে ওষুধ বন্ধ করলে জীবাণুর কিছু অংশ থেকে যায়, যা পরবর্তীতে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসতে পারে। এতে রোগ সেরে উঠতে দেরি হয় এবং জীবাণু প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে।”
ভুল ধারণা ২: বাকি থাকা অ্যান্টিবায়োটিক পরিবারের অন্য সদস্যকে দেওয়া যায়
তিনি জানান, “বাকি থাকা অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যের জন্য লেখা ওষুধ খাওয়া বিপজ্জনক। সংক্রমণের ধরন ভিন্ন হলে ওষুধ অকার্যকর হতে পারে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। সঠিক ডোজ ও সঠিক ওষুধের জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।”
ভুল ধারণা ৩: সব ধরনের সংক্রমণে অ্যান্টিবায়োটিক লাগে
ডা. জৈন বলেন, “অনেকেই ভাবেন, সব সংক্রমণেই অ্যান্টিবায়োটিক দরকার। আসলে ঠান্ডা-জ্বর বা ফ্লুর মতো ভাইরাসজনিত রোগে অ্যান্টিবায়োটিক কোনো কাজ করে না। উল্টো এটি শরীরের ব্যাকটেরিয়াকে অযথা ওষুধের সংস্পর্শে এনে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।”
ভুল ধারণা ৪: অ্যান্টিবায়োটিক ক্ষতিকর নয়, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই
তার মতে, “অ্যান্টিবায়োটিক জীবন রক্ষা করতে পারে, কিন্তু তা সবার জন্য ক্ষতিমুক্ত নয়। হালকা থেকে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।”
ভুল ধারণা ৫: নিজের ইচ্ছায় অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যায়
ডা. জৈন বলেন, “ভারতে এএমআর-এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো অ্যান্টিবায়োটিকের স্বেচ্ছা ব্যবহার। গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতে স্বেচ্ছা-ওষুধ গ্রহণের হার ৮.৩% থেকে ৯২% পর্যন্ত হতে পারে, যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করছে।”
তিনি আরও বলেন, “অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহারও আসলে জীবাণুর মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির চাপ তৈরি করে। তাই শুধু ওষুধের ভুল ব্যবহার নয়, খারাপ স্বাস্থ্যবিধি, বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধার অভাব এবং মানসম্মত ওষুধের অভাবও এএমআর বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।”
শেষে তিনি সতর্ক করে বলেন, “সময় খুব কম। এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে, নইলে ভবিষ্যতে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না। এটি এক প্রকার নীরব মহামারি, যার বিরুদ্ধে সবার যৌথভাবে লড়াই করা জরুরি।”
সূত্রঃ হিন্দুস্তান টাইমস