ঘরের পোষা আদুরে বিড়াল অনেক ক্ষেত্রেই গর্ভবতী নারী ও নবজাতকের জন্য একটি অপ্রত্যাশিত বিপদ ডেকে আনতে পারে। এর কারণ হলো বিড়াল টক্সোপ্লাজমা (Toxoplasma gondii) নামে একটি পরজীবী বহন করে। এই পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণকে ‘টক্সোপ্লাজমোসিস’ বলা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো বিড়াল যদি ইঁদুর বা পাখি শিকার করে খায়, তখন সেই পরজীবী দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। পরবর্তীতে এই পরজীবী বিড়ালের মলের মাধ্যমে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিড়ালের মল পরিষ্কারের সময় একজন গর্ভবতী মা সহজেই এই পরজীবী দ্বারা সংক্রমিত হতে পারেন।
গর্ভকালীন টক্সোপ্লাজমোসিসে আক্রান্ত হলে তা মায়ের জন্য ক্ষতিকর না হলেও, গর্ভের শিশুর জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এর ফলে গর্ভপাতের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়াও, এই সংক্রমণ থেকে পরবর্তীতে শিশুর জীবনে অন্ধত্ব বা মানসিক প্রতিবন্ধিতার মতো গভীর উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
তবে প্রিয় পোষ্যকে ঘর থেকে তাড়িয়ে না দিয়েও কিছু সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে গর্ভকালীন সময়ে নিরাপদ থাকা সম্ভব।
টক্সোপ্লাজমা সংক্রমণ এড়াতে এবং গর্ভকালীন সুরক্ষা বজায় রাখতে ডয়চে ভেলে-এর মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা নিম্নলিখিত সতর্কতাগুলো মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে:
১. মলত্যাগের স্থান পরিষ্কার: গর্ভবতী অবস্থায় বিড়ালের মলত্যাগের স্থান বা ‘লিটার বক্স’ পরিষ্কারের দায়িত্ব পরিবারের অন্য কাউকে দিন। যদি একান্তই নিজেকে পরিষ্কার করতে হয়, তবে অবশ্যই ডিসপোজেবল দস্তানা (গ্লাভস) ব্যবহার করুন এবং কাজ শেষে হাত ভালো করে ধুয়ে নিন।
২. বিড়ালের খাবার নিয়ন্ত্রণ: বিড়ালকে শুধুমাত্র শুকনো বা টিনজাত বাণিজ্যিক খাবার খাওয়ান। কখনোই বিড়ালকে কাঁচা মাংস বা আধসিদ্ধ খাবার দেবেন না, কারণ এটি পরজীবী সংক্রমণের একটি প্রধান উৎস।
৩. বাগানে কাজের পরে সতর্কতা: বাগানে কাজ করার সময় বা মাটি স্পর্শ করার পরে অবশ্যই সাবান ও গরম জল দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন, কারণ বিড়াল সেখানে মলত্যাগ করতে পারে।
৪. ফল ও সবজির পরিচ্ছন্নতা: সবজি ও ফল ভালোভাবে ধুয়ে নিন। প্রয়োজনে ফলের চামড়া বা খোসা ছিঁলে তারপর রান্না করুন বা গ্রহণ করুন।
৫. রাস্তার বিড়াল থেকে দূরত্ব: রাস্তার বা ভবঘুরে বিড়াল থেকে দূরে থাকুন এবং তাদের স্পর্শ করা এড়িয়ে চলুন, কারণ তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে।
গর্ভবতী নারীদের উচিত যেকোনো ঝুঁকি এড়াতে এসব সতর্কতা মেনে চলা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
