
শরীরের বিভিন্ন অংশে দিতেন ইঞ্জেকশন। কিছু বললেই নেমে আসতো পাশবিক নির্যাতন। দীর্ঘ পাঁচ মাস আটকে রেখে এমন নির্যাতন করা হয় সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের লক্ষ্মীবিষ্ণু প্রসাদ গ্রামের মুনসুর আলীর স্ত্রী গৃহবধূ শিল্পী খাতুনকে (৪৮)।
শিল্পী খাতুনের অভিযোগ, বিনা কারণে তাকে ইঞ্জেকশন দেওয়া হতো। এই ইঞ্জেকশন দেওয়ার পর তার সঙ্গে কিছু করা হলেও তিনি বুঝতে পারতেন না। তবে তার আঁচলে রক্তের দাগ লেগে থাকতো। এসবের কারণ জানতে চাইলে তারা তাকে বলতো এগুলো ইঞ্জেকশন দেওয়ার রক্ত।
শুক্রবার (২ এপ্রিল) বিকেলে গৃহবধূ শিল্পী খাতুনের একটি ভিডিওতে তিনি এসব অভিযোগ করেন। এদিন সকালে উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের সোনারাম গ্রামে একটি মিনি আয়নাঘরের সন্ধান মেলে। ওই আয়নাঘরে গৃহবধূ শিল্পী খাতুন ও আব্দুল জুব্বার বন্দি ছিলেন। তারা টানা চার-পাঁচদিন ধারালো একটি কেঁচি দিয়ে মেঝের মাটি খুঁড়ে সুড়ঙ্গ তৈরি করে বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১টার দিকে মুক্ত হন।
শুক্রবার সকালে তাদের এই রোমহর্ষক বর্ণনা শুনে পুলিশ ও স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পান। পরে দুপুরের দিকে এ ঘটনায় জড়িত পল্লী চিকিৎসক নাজমুল হোসেন আরাফাতের বাড়ি ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে উৎসুক জনতা। তিনি একই ইউনিয়নের পশ্চিম লক্ষ্মীকোলা গ্রামের রেজাউল করিম তালুকদারের ছেলে।
এ ঘটনার উপযুক্ত শাস্তি দাবি করে গৃহবধূ শিল্পী খাতুনের স্বামী মুনসুর আলী জাগো নিউজকে বলেন, আমার স্ত্রী গত ৬ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন। পরে কোথাও খুঁজে না পেয়ে ১২ ডিসেম্বর থানায় সাধারণ ডায়রি করি। তাতেও কোনো খোঁজ মেলেনি। অথচ আরাফাত ক্ষুধা নিবারণ ও ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে আমার স্ত্রীকে আয়নাঘরে বন্দি করে রেখেছিল। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার (এসপি) ফারুক হোসেন বলেন, এই ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার থানায় মামলা দায়ের করেছে। মামলার প্রধান আসামি নাজমুল হোসেন আরাফাতকে এরইমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আরও পাঁচজন নামিক আসামি ছাড়াও অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।