হাসপাতালে হা’মলা, ৭ জনের মৃ’ত্যু, ব্যাপক আ’তঙ্কে পালাচ্ছে মানুষ

দক্ষিণ সুদানের একটি শহরে হামলায় অন্তত সাতজন নিহত ও আরো ২০ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে চিকিৎসাসেবাদানকারী দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)। বিশ্বের সবচেয়ে নবীন রাষ্ট্রটি আবারও পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে—এমন আশঙ্কা ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে।

এমএসএফ শনিবার জানায়, দেশটির উত্তরের ওল্ড ফ্যাঙ্গাক শহরে চালানো হামলায় শেষ অবশিষ্ট কার্যকর হাসপাতাল ও ফার্মেসি ধ্বংস হয়ে গেছে। পাশাপাশি এ হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করে এক্সে দেওয়া এক পোস্টে সংস্থাটি আহ্বান জানায়, ‘বোমাবর্ষণ বন্ধ করুন। বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করুন। স্বাস্থ্যসেবাকে রক্ষা করুন।’

এদিকে হামলায় হাসপাতালটিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল কেন, তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়। দক্ষিণ সুদানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছে, কয়েক ঘণ্টা পর ওল্ড ফ্যাঙ্গাকের একটি বাজারের কাছেও আরো হামলা চালানো হয়। এতে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়ায় ও সাধারণ মানুষ পালিয়ে যায়।

প্রেসিডেন্ট সালভা কিরের অনুগত বাহিনীর সঙ্গে ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়েক মাশার ঘনিষ্ঠ বাহিনীর মধ্যে টানাপোড়েন চরমে উঠেছে। ওল্ড ফ্যাঙ্গাক হলো ফ্যাঙ্গাক কাউন্টির একটি বড় শহর, যা মূলত নুয়ের জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত।

ওই অঞ্চল ঐতিহাসিকভাবে মাশারের বিরোধীদলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে কথিত বিদ্রোহের অভিযোগে গৃহবন্দি রয়েছেন মাশার।

এদিকে জাতিসংঘ সম্প্রতি সতর্ক করে জানিয়েছে, দক্ষিণ সুদান ফের পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।

২০১১ সালে স্বাধীনতা লাভের অল্প সময় পরই দক্ষিণ সুদান রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ডিনকা জাতিগোষ্ঠীর প্রেসিডেন্ট কিরের অনুগত বাহিনী লড়াইয়ে নামে মাশারের (নুয়ের জাতিগোষ্ঠী) অনুগত বাহিনীর বিরুদ্ধে। এই সংঘাতে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। পরে ২০১৮ সালের শান্তিচুক্তির মাধ্যমে কির ও মাশার একটি জাতীয় ঐক্য সরকার গঠন করেন।

সাম্প্রতিক এই হাসপাতালে হামলা দেশব্যাপী বিরোধীদলের ওপর সরকারি অভিযানের সর্বশেষ উদাহরণ। মার্চ মাস থেকে শুরু করে উগান্ডার সেনাদের সহযোগিতায় দক্ষিণ সুদানের সরকারি বাহিনী প্রতিবেশী আপার নাইল রাজ্যে বিরোধী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে বহু বিমান হামলা চালিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক পশ্চিমা দূতাবাস শুক্রবার যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, দক্ষিণ সুদানে সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি ‘উল্লেখযোগ্যভাবে অবনতির দিকে যাচ্ছে’। তারা মাশারকে গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট কিরকে বলেছে, ‘রাজনৈতিক সমাধান অর্জনে তাৎক্ষণিকভাবে সংলাপে ফিরতে হবে।’

অন্যদিকে দেশটিতে ২০২৩ সালে নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচন ইতিমধ্যে দুইবার স্থগিত করা হয়েছে। এখন সেটি ২০২৬ সালের আগে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।- আলজাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *